Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

60খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫: পাহাড়ের আলোচিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) ৭৮ সদস্য বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে । স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতেই তারা এই আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম কুরুকপাতা বাজারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমএনপির সদস্যরা আত্মসমর্পণ করবে। ওই অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন এমন কথাও প্রচারে রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বান্দরবান জেলার আলীকদম জোনে এমএনপি’র একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সেনাসদস্যদের বৈঠক হয়। বৈঠকে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান, আলীকদম জোনের উপঅধিনায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অং প্রু ম্রো, মাং সাই প্রু এবং এমএনপির প্রতিনিধি হিসেবে আলীকদমের স্থানীয় চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রটি আরও জানায়, আলীকদম জোনের কুরুকপাতা বাজারে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী। গত ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক এমএনপির ৭৮ সদস্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সব সদস্যের ৬০টি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ম্যাগাজিন ও বিপুল-সংখ্যক গুলিও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলায় ২০১১ সালে ম্রো আদিবাসী যুবকদের নিয়ে এমএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশীয় ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২০১২ সালের দিকে আলীকদমের পোয়া মুহুরীতে ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে সন্ত্রাসী গ্রুপটি। এরপর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে জানান দেয়।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অং প্রু ম্রো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাস অনেক কমবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এমএনপির সদস্যরা। সশস্ত্র গ্রুপটিতে রয়েছেন, জেলার আলীকদমের কুরুক পাতার দুংখা এলাকার মাংপা ম্রো, প্রেন ওয়াই ম্রো, নিয়াদুই পাড়ার মেনরাও ম্রো, রেংসক পাড়ার রেংইন, সংএ পাড়ার পংঙি ম্রো, মারান পাড়ার ঙুই ক্রুম ম্রো, মাং অং ম্রো, কদনপাড়ার কদন ম্রো। থানছি উপজেলার চাকুপাড়ার মাং তং ম্রো, লাং পুং ম্রো, ওয়াকপাড়ার কৃতুই ম্রো, চাইয়াং পাড়ার বাশা ম্রো, অম্পুং পাড়ার হ্লা থোয়াই, অমই পাড়ার থংওয়াই ম্রো, বোডিংপাড়ার নংলাই ম্রো, রামুং ম্রো এবং লুহুপ ম্রো।
এছাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নিওয়াকপাড়ার থংয়া ম্রো, মংহ্লাপাড়ার মইশা ম্রো, কাইওয়াই ম্রো, লুলেং হেডম্যান পাড়ার আম শে প্রে ম্রো, সড়ই ইউনিয়নের তাংলাই ম্রো এবং জেলার রুমা উপজেলার ফতেসিংপাড়ার কাইওয়াই ম্রোসহ অনেকেই সংগঠনটির সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের অধিকাংশ এবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে।
এই ব্যাপারে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
সূত্র জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এমএনপির কর্মকাণ্ড। তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী ও ম্রো আদিবাসী জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্যোগ নেন। জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপেলা রাজু নাহা এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের এমএনপি প্রধান মেনচিং ম্রো গ্রেফতার হওয়ার পর পালে ম্রো এই বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্রো এবং ৭ জুন সংগঠনটির প্রধান পালে ম্রো আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরি এলাকার পাহাড় ভাঙা গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। পালে ম্রো আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন।
এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আল আমিন বলেন, ‘আমি শুনেছি যে তারা আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। কিন্তু সেনা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে না জানানোর কারণে অফিসিয়ালি কিছু বলতে পারবো না।’
২০১২ সালে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের লাগাতার অভিযানে এই বাহিনীর ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়, আত্মসমর্পণ করে ৪২ জন।