খোলা বাজার২৪ ॥শুক্রবার, ৬ নভেম্বর ২০১৫: দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ ব্যয়বহুল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল বিত্তবানদের সন্তান নয়, দরিদ্র মেধাবী সন্তানদেরও শিক্ষার সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ব্যয়বহুল মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এখানে সমাজে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। এ জন্য উচ্চশিক্ষায় তাদের বৃত্তিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। কেবল বিত্তবান ঘরের সন্তান নয়, দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তানেরাও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়, বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সম্প্রতি কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে—মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনোই মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে না এবং তা হওয়া কাম্যও নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে জ্ঞানার্জনের প্রকৃত ক্ষেত্রে পরিণত হয়, তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।’
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি পুরান ঢাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিচরণের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। ১৯৭০ সালে ‘সাপ্তাহিক একতা’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশের কথা উল্লেখ করে প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে দৈনিক সংবাদসহ চারটি পত্রিকায় কাজ করেছি। ‘৯২ সালে ভোরের কাগজ ও পরবর্তী সময়ে প্রথম আলো পত্রিকা গড়ে তুলেছি।’
মতিউর রহমান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটাই সব নয়। মনের দরজা খোলা রাখা চাই। দেশের আর বিশ্বের যা কিছু ভালো, যা কিছু সৃজনশীল—কবিতা-সাহিত্য-চিত্রকলা-সংগীত-নাটক-সিনেমা এবং জীবন থেকে প্রেরণা নিতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। নিজের স্বপ্নকে বহু মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে যূথবদ্ধ করতে হবে। বক্তব্যের শেষের দিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি আলোকিত হবেন। আপনার মাধ্যমে আলোকিত হবে চারপাশ—এই দেশ, এই সমাজ ও এই বিশ্ব। আর আমরা জানি, আপনি ভুলবেন না আপনার মাকে এবং আপনার জন্মভূমি প্রিয় এই বাংলাদেশকে।’
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ সমাবর্তন পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে নতুন দিগন্ত, যে পেশাতেই তোমরা নিয়োজিত হও না কেন, তাতে সর্বোচ্চ দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদ আন্দালিব বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য বৈশ্বিক শিক্ষার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এমন শিক্ষা দিতে চায়, যা থেকে সমাজ মজবুত হয়।