খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৫: সাভারের এইচআর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে ঢুকে বা”চাদের আধো আধো কথা শুনে আর তাদের খেলাধুলা দেখে যে কেউ আশ্চর্য হতেই পারেন।
কারখানাটির ৩৫০০ বর্গফিট একটি স্থানকে বিশেষভাবে সাজিয়ে সেখানে তৈরি করা হয়েছে একটি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র। প্রয়োজনীয় সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেখানে। যে সমস্ত নারী কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের বা”চাদের সুবিধার জন্য আছে খেলার জায়গা, ঘুমানোর স্থান, মাতৃদুগ্ধ পানের আলাদা কর্নার, টয়লেট, তৈজসপত্র রাখার ঘর এবং রান্নাঘর।
কর্মক্ষেত্রে যেখানে এ ধরনের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র দেখাই যায় না সেখানে কিছু গার্মেন্টস কারখানাসহ আরও কিছু কোম্পানি অন্যদের জন্য ব্যতিক্রমী এ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।
২০০৮ সালে ‘ফুলকি’ নামক একটি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় এ শিশু কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে এইচআর টেক্সটাইল। ‘ফুলকি’ ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের উন্নয়নে সহায়তা করে থাকে।
এইচআর টেক্সটাইলের মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক এম এম ইমরান-আল-হাসান বলেন, শিশু কেন্দ্রটিতে যে সুবিধা দেওয়া হয় সে তুলনায় এর খরচ অনেক কম।
এখানে প্রায় ২০টি শিশুকে রাখা যায়। এখানে ৬ মাস থেকে দুই বছরের শিশুদের খাবারের খরচসহ প্রতিমাসে কোম্পানিকে ৮০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।
ইমরান আরও বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী কর্মী। তারা তাদের বা”চাদের রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। কাজের সময় বা”চাদের দেখতে তাদেরকে বাসায় যেতে হয় না।’
গার্মেন্টস কারখানাটি পরিদর্শনকালে শিখা নামের একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার দেড় বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তিনি তার বা”চাকে দুধ পান করাচ্ছিলেন। তার উৎফুল্ল বা”চাকে দেখে সে বেশ খুশি হয়।
শিখা বলে, ‘আমি আগে আমার বা”চাকে বাসায় কারো কাছে রেখে আসতাম। এতে আমাকে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। ও অনেক কান্না করতো। আমি দুপুরের খাবারের সময় তাকে গিয়ে দেখে আসতাম।’
সে আরও বলে, ‘এখন আমি যেকোনও সময় আমার সুপারভাইজারের অনুমতি নিয়ে আমার বা”চাকে দেখে আসতে পারি এবং কোনও উদ্বেগ ছাড়াই কাজ চালাতে পারি।’
রাজধানীর মিরপুরের ফিনারি লিমিটেড জানায়, তাদের শিশুকেন্দ্রের মাধ্যমে কিভাবে তারা এবং তাদের নারীকর্মীরা উপকৃত হচ্ছে।
গার্মেন্টসটির ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, তাদের গার্মেন্টসটির মেশিন অপারেটরদের অর্ধেকই নারী। বা”চাদের দেখাশুনা না করতে পারায় তারা অনেক সময়ই কাজে অনুপস্থিত থাকতো। ২০০৪ সালে শিশু কেন্দ্রটি স্থাপন করার পর থেকে এ হার কমে এসেছে।
বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অনুসারে, কোনও কারখানায় কমপক্ষে ৪০ জন নারী কর্মী থাকলে সেখানে ৬ বছরের কম বয়সী বা”চাদের জন্য অন্তত ১টি কক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে ফুলকির নির্বাহী পরিচালক সুরাইয়া হক বলেন, ফুলকি ১৯৯১ সাল থেকে এ ধরনের প্রকল্প চালিয়ে আসছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে সুরাইয়া শিশু কেন্দ্র স্থাপনের উপর গুরুত্ব দেন। ইউনিসেফ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় ফুলকি বর্তমানে ৪০টি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এছাড়াও বর্তমানে ঢাকার বস্তিগুলোতে একই ধরনের ১৭টি প্রকল্প চালাচ্ছে ব্র্যাক।