Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

12খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার ৮ নভেম্বর ২০১৫: বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। ৩ মাস আগেও এর হার ছিল স্বাভাবিক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেধে দেয়া অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নাজুক পরিস্থিতির। ফলে গত ৪ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।
কাস্টম হাউজে কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া। রাজস্ব আদায় বাড়াতে গিয়ে আমদানিকৃত সব পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ।
কারণে অকারণে জরিমানা আদায় করায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের দূরুত্ব। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি চলছে নানামুখী হয়রানি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকরা ব্যবসায়িক সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী মংলা. সোনামসজিদ ও ভোমরা বন্দরে চলে গেছে। বেনাপোল বন্দরের সাথে ওইসব বন্দরের শূল্কায়ন মূল্য পার্থক্যের কারণে আমদানিকারকরা প্রতিবেশী বন্দর ব্যবহার করছেন। ফলে বেনাপোল কাস্টমসে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।
কাস্টমসের পরিসংখ্যান শাখা সূএে জানা যায়, গত ৪ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। প্রতি দিন ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে থাকলেও নিরসনের কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলে দিনের পর দিন সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। ভারত থেকে পণ্য আমদানির সব চেয়ে বড় স্থলবন্দর এটি। আগে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আমদানি হতো প্রায় ৫ ‘ ট্রাক মালামাল। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে তার অর্ধেক।
বেনাপোল বন্দরের চিরচেনা উচ্চ শূল্কহারের পণ্যগুলো অধিকাংশ এখন আমদানি হচ্ছে মংলা বন্দর দিয়ে। ফল, পেঁয়াজ, চাল, মাছসহ পচনশীল পণ্য চলে গেছে ভোমরা ও সোনামসজিদ বন্দরে। বেনাপোল কাস্টমসের সাথে অন্য সব শূল্ক স্টেশনের অভিন্ন মূল্যে শুল্কায়ন না হওয়ায় আমদানিকারকরা তাদের সুবিধার্থে অন্য বন্দরে চলে যাচেছ বলে জানান সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট ব্যবসায়িরা।
কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি(২০১৫-১৬) অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১শ’ ৬০ কোটি টাকার ওপরে। গত অর্থবছরে শেষ ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। নিজেদের গা বাঁচাতে তখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাসের বিপরীতে জমাকৃত জামানত বন্ড নগদায়ন করে সে ঘাটতি পূরণ করে রাজস্ব উদ্বৃত্ত দেখান।
কাস্টমসের হয়রানির কথা বলতে গিয়ে বেনাপোলের আমদানিকারক কামাল ট্রেডার্স এর মালিক কামাল হোসেন জানান, ‘আগেও এক/দুদিনে বেনাপোল দিয়ে সব ধরনের মালামাল ছাড় নেয়া যেত। সেই সব মাল ছাড়াতে এখন সময় লাগে কমপক্ষে ১০ থেকে এক মাস পর্যন্ত। কাস্টমসের হয়রানির কারণে ট্যাক্স বেড়ে গেছে ৩ গুণ। ডিউটি দিয়ে মাল ছাড়িয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে। চোরাচালানের মাধ্যমে আসা মাল কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, ফলে বেনাপোল দিয়ে মাল আমদানি করছি না।’
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আলহজ্ব আমিনুর রহমান (আনু) জানান, ‘বেনাপোল দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। বন্দরটিকে ধ্বংস করার জন্য একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বেনাপোল কাস্টম কর্মকর্তারা ব্যবসায়িদের সাথে কোন আলোচনা না করেই আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছেমত পণ্যের এইস এস কোড পরিবর্তন করছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘বর্তমান বেনাপোল কাস্টম হাউসে যেসব কর্মকর্তারা কর্মরত আছেন এরা সবাই ভ্যাটে চাকরি করতেন। রাজস্ব কিভাবে আহরণ সম্ভব এ ধারণা কম থাকায় রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে। বর্তমানে বেনাপোলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নেই। দিনদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে যাচ্ছে। এছাড়া বেনাপোলে রয়েছে ভারতের সাথে বিশাল সীমান্ত এলাকা যা পুরোপুরি রক্ষিত নয়। বিজিবি ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারীরা এসব সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পণ্য সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। কাস্টম কর্মকর্তারা যদি হয়রানি বন্ধসহ শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি না করতো তাহলে চোরাপথে পণ্য আসা বন্ধের সাথে সাথে এ বন্দর দিয়ে আমদানি বৃদ্ধি পেতো আর বাড়তো সরকারের রাজস্ব।’
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম জানান, ‘কাস্টম কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে বেনাপোল দিয়ে মাল আমদানি কমে গেছে। প্রতিদিন আমরা প্রায় ৫শ’ ট্রাক মালামাল পরিবহন করতাম এখন তা কমে এসেছে ১শ’ ট্রাকে। কাজ কর্ম না থাকায় অফিসের স্টাফরা কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
বেনাপোল জে অ্যান্ড জে ও সি অ্যান্ড এফ এজেন্টের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান খোকন জানান, ‘বেনাপোল বন্দর নিয়ে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে জোর করে পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি করে আমদানিকারকদের এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করতে নিরুৎসাহিত করছেন। তাছাড়া এই বন্দর থেকে ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু করেছে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১শ’ টন ঘোষণা দিয়ে ১৫০ টন আমাদনি করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ব্যবসায়িদের এ ধরনের অভিয়োগ মানতে নারাজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।’
কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আব্দুল্লাহ খান জানান, ‘ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন বন্ধের কারণে ভারত থেকে মালামাল আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কিছুটা কম হয়েছে। ঘাটতি রাজস্ব আদায়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আশা করছি পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।