Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

33খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার ৮ নভেম্বর ২০১৫: তাঁর জীবনটাই অদ্ভুত। মাঠের বড় বড় কোনো প্রতিপক্ষ নয়, আসল শত্রু অদৃশ্য। যে শত্রুটা আবার অনেকের খুব কাছের বন্ধু। যাকে কেউ বলে ভাগ্য, কেউ দুর্ভাগ্য। ভাগ্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে অনেকে ক্লান্ত হয়ে যায়। এত শক্তিমান প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে কত দিনই বা পারা যায়। কিছুটা ক্লান্তি ভর করেছিল তাঁর মধ্যেও। কিন্তু মাশরাফি যেন আবার গা-ঝাড়া দিলেন। ছুড়ে দিলেন চ্যালেঞ্জ।
মাত্রই ডেঙ্গু জ্বর থেকে উঠেছেন। পুরো ফিট কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সংশয় ছিল তাঁর মাঠে নামা নিয়েও। মাশরাফি হয়তো এখনো শতভাগ ফিট নন দশ ওভার বোলিং করার জন্য। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিই দলের চেহারা বদলে দেয়। মাশরাফি অবশ্য কাল খেলায় সেই আঁচ পেতেই দিলেন না। ব্যাটিংয়ে ভূমিকা রাখলেন। বোলিংয়ে তো দলের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার​।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটও হয়ে গেল। সাকিবের পর পরই এখন তিনি। ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট ২০৬টি, মাশরাফির ২০২। দেশের সেরা বোলার সাকিবের চেয়ে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র একটি বেশি। এখান থেকেই বোঝা যায় মাশরাফির পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। আবার এই তথ্যও বলে দেয়, সাকিবের চেয়ে ৫ বছর আগে অভিষেক হয়েও তাঁর সমান ম্যাচ খেলা মানে মাশরাফির জন্য কতটা দুর্ভাগ্যের। চোট আর ভাগ্য এভাবে না পোড়ালে উইকেট সংখ্যা আরও বাড়ত নিশ্চয়ই!
জানালেন, শরীর এখনো পুরো সেরে ওঠেনি, ‘শারীরিকভাবে দুর্বলতা এখনো আছে। ৪ ওভার পর যখন উইকেট পেলাম, তখনই চিন্তা করেছি আরও বল করবও। চেষ্টা করছিলাম ৫-৬ ওভার পর্যন্ত নিজেকে জোর করে হলেও বল করানো। এটা আমার পরিকল্পনাতেই ছিল।’
ওয়ানডেতে এমনিতে ২০০ উইকেট আগেই পূর্ণ হয়েছিল। এশিয়া একাদশের হয়ে একটি উইকেট পেয়েছিলেন বলে। তবে নামটা যখন মাশরাফি, লাল-সবুজ যাঁর হৃদয়ে আঁকা, সেই তিনি নতুন করে উদ্বেলিত তো হবেনই। ২০০ উইকেট পাওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন না হলেও দেশের হয়ে সেটি পূরণ করার রোমাঞ্চ মাশরাফির কাছে তাই অন্য রকম, ‘বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারা সব সময়ই আন›“ায়ক।’
নামের পাশে ম্যাচ আর উইকেট সংখ্যা দুটোই বাড়তে পারত অনায়াসে। কেবল হাঁটুতেই সাতটি অস্ত্রোপচার, ভাবা যায়! আর কেউ হলে হয়তো ঠিকানা হতো হুইল চেয়ার। সেখানে মাশরাফি মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানুষটা মাশরাফি বলেই সম্ভব। তবে সেই সরল মনে একটু হলেও দাগ কেটে যায় আফসোস, ‘সবাই জানেন আমার জীবনে অনেক ইনজুরি ছিল। ভারত সিরিজের পর হঠাৎ​ দুর্ঘটনা, রিকশা অ্যাকসিডেন্ট। আর এবার তো ডেঙ্গ্ইু গেল সিরিজের আগ মুহূর্তে।’
এসব নিয়ে হতাশ হওয়ার চেয়ে নতুন প্রেরণাই নেন বেশি। মজা করেই বললেন, ‘এখন খেলার চেয়ে এগুলো বেশি উপভোগ করি মনে হয়। কিছু না হলে খেলতে বরং ভালো লাগে না।’
এই কৌতুকে মিশে থাকল হাহাকারও। তবে নতুন চ্যালেঞ্জে সব সময়ই নিজেকে উজ্জীবিত করা মাশরাফি বললেন, ‘এখনো মনে করি না দেশের জন্য এমন কিছু করতে পেরেছি। দোয়া করবেন সামনে যেন কিছু করতে পারি।’
সেই দোয়া মাশরাফি না চাইলেও পাবেন। তাতে ১৬ কোটি মানুষের ৩২টি হাতই শামিল হবে নিশ্চিত