Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

61খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার ৮ নভেম্বর ২০১৫: কথায় আছে, একবার না পারিলে দেখো শতবার। চেষ্টা করলে মানুষ কী না পারে! একসময় সামাজিক গোষ্ঠীর ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল জীবন। সংঘবদ্ধ হয়ে শিকার ধরা এবং তা ভোগ করাই ছিলো সে জীবনের লক্ষ্য। তারপর ধীরে ধীরে রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সংযোগ স্থাপন। এ সবকিছুই মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির আগে আমরা দেখেছি, পৃথিবীর অনেক মহৎ প্রাণ পরিব্রাজকই পদব্রজে বিশ্বের নানা দেশ ভ্রমণ করেছেন। পা এবং কোথাও কোথাও পানিপথ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিলো না। তবু তারা তাদের পিপাসাকে নিবারণ করতে একবারও পিছ পা হয়নি।
এবার সেরকমই এক প্রয়াসের প্রমাণ দিলেন ভারতের এক প্রতিশ্র“তিশীল সৌখিন মানুষ। আধুনিক বিশ্বের মানুষ যখন বিমান উড়োজাহাজে চড়ে ভিন্ন রাষ্ট্র বা দূর দেশে ভ্রমণ করতে যায় সেখানে চার চাকার একটি গাড়ি নিয়েই তিনি তা করে ফেললেন। ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে পরিবার নিয়ে প্রায় ১১টির মতো রাষ্ট্র ইতোমধ্যে ভ্রমণ করলেন ভারতের বেঙ্গালুরু রাজ্যের আনন্দ বৈদ্য নামে এক ব্যক্তি।
মনে অবশ্যই প্রশ্ন জাগতে পারে, গাড়ি নিয়ে আপনি কত দূর ড্রাইভ করবেন? দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, হিল্লি থেকে দিল্লি, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া? কিন্তু বেঙ্গালুরু থেকে প্যারিস! মাঝখানে যে মহাদেশীয় দূরত্ব! কিন্তু তাতে কী? যে করার সে শত বাধা অতিক্রম করে তা করবেই। এবার তেমন ঘটনাই ঘটলো। বেঙ্গালুরুর আনন্দ বৈদ্য সপিরবারে গাড়িতে করেই প্রায় অর্ধেক বিশ্ব ভ্রমণ করে ফেললেন।
চলতি বছরের গোড়ার দিকেই এই অসাধারণ ট্রিপে বেড়িয়ে পড়েন বৈদ্য পরিবার। আনন্দ, তার স্ত্রী পুনিতা, ১২ বছরের ছেলে যশ এবং ৮ বছরের মেয়ে ধৃতি এবং তাদের সাধের গাড়ি ফিয়াট লিনিয়া। সবকিছু গুছিয়ে নিজের বাড়ি অর্থাৎ বেঙ্গালুরু থেকেই রওনা হন এই পরিবার। তারপর একে একে মোট ১১টি দেশ ঘুরে অবশেষে পৌঁছান তাদের কাক্সিক্ষত পছন্দের শহর প্যারিসে।
গণমাধ্যমকে দেয়া তথ্যে জানা গেছে, তাদের সফর বেশ ঘটনাবহুল ছিল। ভারত থেকে নেপালে পৌঁছানোর পর প্রায় দিন পাঁচেক তারা আটকে পড়েন ভূমিকম্পের কারণে। সুস্থ শরীরে সেখান থেকে যে তারা বেরুতে পেরেছিলেন তার জন্য ভাগ্যকে বারংবার ধন্যবাদ দেন আনন্দ। সেখান থেকে তিব্বত হয়ে চীন। তারপর একে একে তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরঘিজস্তান, ইরান, তুরস্ক, গ্রিস, স্পেন হয়ে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্যারিস নগরী।
অবশ্য এত লম্বা একটা ট্রিপের জন্য বাচ্চাদের স্কুল থেকে বিশেষ ছুটির আবেদন করেন আনন্দ। বইয়ে ছবি দেখার চেয়ে বিভিন্ন দেশ ঘোরার বিরল অভিজ্ঞতা থেকে বাচ্চাদের বঞ্চিত করতে চাননি স্কুলের প্রিন্সিপাল। আদ্যোপান্ত নিরামিষাশী বৈদ্য পরিবারের সব থেকে অসুবিধা হয়েছে খাওয়া-দাওয়া করতে। যেমন ইরানে নিরামিশ খাবারের কোনও প্রচলনই নেই। আনন্দকে রীতিমতো রাঁধুনীকে শাক-সব্জির ছবি দেখিয়ে রান্না করাতে হয়েছিল।
এমনই নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে প্যারিস পৌঁছানোর অদ্ভূত রোমাঞ্চ সকলের সঙ্গে ভাগ করতে তারা একটি ফেসবুক পেজও খোলেন। ফেরার সময় বিমানে করে ফেরেন দেশে। তবে তাদের সাধের গাড়িটি আনিয়ে নেন শিপিং অর্ডার দিয়ে।
অসাধ্যকে সাধন করাই মানুষের ধর্ম। যেখানে বাধা সেখানেই মানুষের এগিয়ে যাবার পদচিহ্ন রচিত হয়েছে যুগে যুগে। এবার সেরকমই এক আত্মপ্রত্যয়ের পরিচয় দিলেন আনন্দ। তার এই প্রয়াস একান্ত তার নিজের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে ভারত সহ সমগ্র বিশ্ব এমন প্রচেষ্টাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারে।