খোলা বাজার২৪ ॥সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০১৫: প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন খোদ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তবে শেষ মুহূর্তে প্রতারণা বুঝতে পেরে অল্পের জন্য আর্থিক ক্ষতি থেকে বেঁচেছেন তিনি। রবিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ ঘটনার বিবরণ দেন মন্ত্রী।
সকাল ৯টার দিকে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) আশরাফুল আলম ডাবলুর মোবাইল ফোনে ০১৭১৫০০৭২৬৬ নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে নির্বাচনী এলাকার (ফুলপুর-পার্বতীপুর) জজ মাহবুবুর রহমান পরিচয় দিয়ে একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। পিও মন্ত্রীকে ফোন দিলে ওই ব্যক্তি বলেন, স্যার আমার পিয়ন হিসেব যিনি কাজ করে ঢাকায় তার মা মারা গেছে। তারা আপনার নির্বাচনী এলাকার। লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে রয়েছে। লাশ আনতে ৩৪ হাজার টাকা লাগবে। আমরা ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি, বাকি টাকাটা আপনি দিলে লাশটা গ্রামে আনা যাবে।
এ পর্যায়ে ওই ব্যক্তি পিয়নের (যার মা মারা গেছে) মোবাইল নম্বর (০১৯১৬০৬৯০০৪) দেন, এ নম্বরে টাকা বিকাশ করার জন্যও বলেন।
এ কথা শোনার পর মন্ত্রী তার কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেন। তারা ১৭ হাজার টাকার ব্যবস্থাও করে ফেলেন। এ সময় মন্ত্রীর বাসায় অবস্থান করছিলেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন আহাদ আলী। তাকে বিষয়টি জানাতেই তিনি বলেন, এর আগে তিনি এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার কথা শুনে মন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তার নির্বাচনী এলাকার পিপির (পাবলিক প্রসিকিউটর) কাছে ফোন দেন।
পিপি জানান, মাহবুবুর রহমান নামে কোন জজ নেই। মন্ত্রীর সন্দেহ হলে তিনি আবার মাহবুবুর রহমান পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির মোবাইলে ফোন দেন। এবার ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি যুগ্ম জেলা জজ, সম্প্রতি তিনি রংপুরে বদলি হয়েছেন। এরপর এ নামে কেউ ছিল বলে পিপি নিশ্চিত করতে পারেনি।
এছাড়া মন্ত্রী মৃত ব্যক্তির গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তি বলেন, খালিশপুর। মন্ত্রী জানান তার নির্বাচনী এলাকায় এ নামে কোন গ্রামই নেই। কথোপকথনের এক পর্যায়ে লাইন কেটে দেন ওই ব্যক্তি। এরপর ফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকাশের জন্য দেওয়া নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
মন্ত্রীর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রী কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেননি, তবে বিষয়টি দিনাজপুরের পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে।
এর আগেও মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতারকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ ফেব্র“য়ারি শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোন করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ইউএনও সরাসরি মন্ত্রীর সরকারি নম্বরে ফোন দেওয়ার পর সব বেরিয়ে যায়।
এর একদিন পর শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
গত ২২ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পরিচয় দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র আব্দুল হাই আকন্দের কাছ থেকে ২৪ হাজার ৫৭৫ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।