Mon. Aug 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

68খোলা বাজার২৪ ॥সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০১৫: ব্যাটিং-বোলিংয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অভাব অনুভব করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে বড় ব্যবধানে হারা জিম্বাবুয়েও দিয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত। কিন্তু সাকিবের বদলে দলে আসা ইমরুল কায়েসের দৃঢ়তা আর বোলারদের দাপটে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ই পেয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
৫৮ রানের জয়ে দারুণ অবদান রয়েছে পেসার আল আমিন হোসেনের। পরপর দুই ওভারে সিকান্দার রাজা ও এল্টন চিগুম্বুরাকে বিদায় করে তিনিই ম্যাচ বাংলাদেশের মুঠোয় নিয়ে আসেন।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এনিয়ে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতলেন মাশরাফিরা।
সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৪১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৩ ওভার ২ বলে ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। আগের ম্যাচে চোট পাওয়া রিচমন্ড মুতুমবামির জায়গায় দলে আসা রেগিস চাকাভাকে পঞ্চম ওভারেই ফিরিয়ে দেন আরাফাত সানি। বোলিং এসে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে একটি করে ছক্কা ও চার হাঁকানো চামু চিবাবাকে ফেরান মাশরাফি। তার বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান চিবাবা।
আরাফাত-মাশরাফির পর আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এই বাঁহাতি পেসারের বলে নাসির হোসেনের ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরে যান শন উইলিয়ামস।
৪৫ রানে তিন উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে ক্রেইগ আরভিন ও অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরার ব্যাটে। সরাসরি থ্রোয়ে আরভিনকে ফিরিয়ে ৩৩ রানের এই জুটি ভাঙেন লিটন দাস।
এরপরই অতিথিদের সবচেয়ে বড় জুটি গড়ে উঠে চিগুম্বুরা ও সিকান্দার রাজার মধ্যে। তাদের ৭৩ রানের জুটি জয়ের পথে নিয়ে আসে জিম্বাবুয়েকে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পরপর দুই ওভারে রাজা ও চিগুম্বুরাকে ফিরিয়ে অতিথিদের জয়ের স্বপ্নে বড় একটা ধাক্কা দেন আল আমিন হোসেন।
আল আমিন বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে ইমরুলের সহজ ক্যাচে পরিণত হন রাজা। এরপর থার্ড ম্যানে চিগুম্বুরার দারুণ একটি ক্যাচ তালুবন্দি করেন ইমরুল।
৩৬তম ওভারে ১৫৬ রানে জিম্বাবুয়ের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে বাংলাদেশ। ব্যবধান কমাতে জিম্বাবুয়ে তাকিয়ে ছিল ম্যালকম ওয়ালার ও লুক জংউইয়ের দিকে। ভালো করতে পারেননি দুজনের কেউই।
নাসিরের বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন ওয়ালার। আর মুস্তাফিজের বলে উড়ে যায় জংউইয়ের অফ স্টাম্প। সেই ওভারেই টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকেও ফেরান এই পেসার।
গ্রায়েম ক্রেমারকে স্টাম্পড করে অতিথিদের দুইশ’ রানের আগেই গুটিয়ে দেন নাসির।
এক সময়ে ৪ উইকেটে ১৫১ রান করা জিম্বাবুয়ে শেষ ৬ উইকেট হারায় ৩২ রানে।
৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ। এছাড়া আল আমিন ও নাসির দুটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ইমরুলের সঙ্গে তামিম ইকবালের উদ্বোধনী জুটি স্থায়ী হয় ৭ ওভার। এই সময়ে ৩০ রান তুলেন এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। থিতু হয়ে ফিরে যান তামিম। পানিয়াঙ্গারার বলে উইকেটরক্ষক চাকাভার গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
আগের ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধন করা লিটন এই ম্যাচে নামেন তিনে। এক ছক্কাসহ ৭ রান করেন ফিরে যান তিনি। পানিয়াঙ্গারার অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। ঠিক মতো পারেননি, বল ব্যাটের কানায় লেগে চাকাভার গ্লাভসে জমা পড়ে।
লিটনের মতো টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহও। আগের ম্যাচে ৯ রান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবার ফিরেছেন ৪ রান করে। লেগ স্পিনার ক্রেমারের বলে চাকাভার গ্লাভসবন্দি হন তিনি।
৭৯ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে ইমরুল ও আগের ম্যাচে শতক করা মুশফিকের ব্যাটে। তাদের ৪৮ রানের জুটি ভাঙে মুশফিকের বিদায়ে।
শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করা মুশফিক ফিরে যান ক্রেমারের বলে জংউইকে ক্যাচ দিয়ে। এগিয়ে এসে কাভার দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ উঠে যায়।
বিশ্বকাপের পর দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা ইমরুল দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। ৮৯ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ভালো সংগ্রহের পথে রেখেছিলেন তিনিই। দুই রানে একবার জীবন পাওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে যান ৭৬ রান করে।
উইলিয়ামসের আগের বলে এগিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ইমরুল। পরের বলে এগিয়ে এসে লং অফ দিয়ে আবার উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়েছিলেন তিনি। এবার ফুলটস বলে ক্রেমারের হাতে ধরা পড়েন ইমরুল।
গত বছর মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে অর্ধশতক পেয়েছিলেন ইমরুল। তার পরের সাত ইনিংসে একবারও দুই অঙ্কে যেতে পারেননি ইমরুল। এবার পেলেন ক্যারিয়ারের একাদশ ওয়ানডে অর্ধশতক।
৩২তম ওভারে ১৫১ রানে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল শেষ দুই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ও নাসিরের দিকে। ৪২ রানের এক জুটিতে তারা দলকে দুইশ’ রানের দিকে এগিয়ে নেন।
জংউইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে চাকাভাকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাব্বির। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবার ফিরে যান ৩৩ রান করে।
মাশরাফি ক্রিজে আসেন ৪২তম ওভারে। নাসিরের সঙ্গে ৫.৫ ওভারে ৩৮ রানের কার্যকর একটি জুটি গড়েন তিনি। পরের ওভারে ফিরে যান নাসিরও। পানিয়াঙ্গারার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে আরভিনের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এরপর আর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস।
৪১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার পেসার পানিয়াঙ্গারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪১/৯ (তামিম ১৯, ইমরুল ৭৬, লিটন ৭, মাহমুদউল্লাহ ৪, মুশফিক ২১, সাব্বির ৩৩, নাসির ৪১, মাশরাফি ১৩, আরাফাত ৩, আল আমিন ১*, মুস্তাফিজ ৫*; পানিয়াঙ্গারা ১০-০-৪১-৩, জংউই ৮-০-৪৭-১, মুজারাবানি ৯-০-৩২-২, রাজা ৭-০-৩৩-০, ক্রেমার ১০-০-৪১-২, উইলিয়ামস ৬-০-৩৭-১)
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ (চিবাবা ১৪, চাকাভা ১, আরভিন ২৬, উইলিয়ামস ১৪, চিগুম্বুরা ৪৭, রাজা ৩৩, ওয়ালার ৮, জংউই ১১, ক্রেমার ১, পানিয়াঙ্গারা ৪, মুজারাবানি ১*; মুস্তাফিজ ৮-০-৩৩-৩, মাশরাফি ৯-১-৪৭-১, আরাফাত ৯-০-৩৪-১, আল আমিন ৮-০-২২-২, নাসির ৯.২-০-৩৬-২)
ফল: বাংলাদেশ ৫৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: ইমরুল কায়েস

অন্যরকম