খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাজয় শুধুই বিহারের ২৪৩ আসনের বিহারে সীমাবদ্ধ নেই। বরং আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে মে মাসে ২৯৪ আসনের বিহারের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
মনে করা হচ্ছে, প্রচার-প্রচারণায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রায় সমান-সামন থাকতে চাইবে মোদির বিজেপি। তবে ভোট বাক্সে লড়াইয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখা যাবে সেই চিরাচরিত তৃণমূল-বামফ্রন্টেই। বিহারে ভাল ফল করে কিছুটা চাঙা সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তাই তারাও প্রচারে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবে বলেও মনে করেন রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিহারের হারের ফলে পৌনে দুই বছরের মোদি ম্যাজিক যে ফিকে হতে শুরু করেছে সেটা আর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিরোধীদের কষ্ট করে প্রচারে আনতে হবে না। রাজনীতি সচেতন পশ্চিমবঙ্গবাসী বিহারে বিজেপির হার থেকে এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন ৮ নভেম্বর রবিবার।
এদিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিহারের নির্বাচনের ফলফল প্রকাশ হওয়ার চার-দিনের মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এমনকি তাদের প্রায় প্রত্যেক দিনের রুটিন প্রেস ব্রিফিংও অনুষ্ঠিত হয়নি গত চার দিনে। বিহারে হারের কারণ নিয়ে রাজ্য বিজেপি তাদের তরফে এখন কোনও ব্যাখা দাঁড় করাতে পারেনি বলেই বিজেপি নেতৃত্ব মিডিয়ার মুখোমুখি হতে চাননি। আর সেখানেই বিজেপি বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, যেখানে প্রতিবেশী রাজ্যের হার-জিতের কোনও রাজনৈতিক উত্তরই চার দিনের মধ্যে বিজেপি রাজ্য দপ্তর তৈরি করতে ব্যর্থ। আর সেখানে ৪ বছরের শাসক তৃণমূল, ৩৪ বছরের শাসক বামফ্রন্ট কিংবা কেন্দ্রে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে কি করে সামিল হবেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
বিহারে বিজেপির হারের আঁচ পেয়ে ৫ দফা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় নীতিশ-লালুকে সমর্থন জানিয়ে তাদের ভোট দেওয়ার জন্য বিহারবাসীকে অনুরোধ করেছিলেন তৃণমূল সভানেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ হিসাবে ফোন করেন লালু-নীতিশ জুটি। লালু পরিস্কার ভাষায় মমতা ব্যানার্জিকে বলেন, বিহার জয় করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে যেতে চেয়েছিলেন মোদি। কিন্তু আমরা মোদিকে বিহারেই রুখে দিলাম।
বিহারে বিজেপির পরাজয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে খুশি হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি, আর সে কারণে টুইট করে মমতা জানিয়েছিনে, এই জয় অসহিষ্ণুনার বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার জয়।
সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচন ২০১১ সালে বিজেপি একটিও আসন পায়নি। তবে গত লোকসভা নির্বাচনে ৪২ আসনের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল। দুটি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির জয় এবং কেন্দ্রে শাসক হিসাবে বিজেপি অধিষ্ঠ হওয়া রাজ্যজুড়ে বিজেপি তাদের সংগঠন বিস্তার শুরু করে। প্রচার প্রচারণায় শাসক দলের মতো পাল্লা দিয়ে চলছে মোদির বিজেপি।
যদিও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজ্যের বেশ কয়েকটি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজেপি অত্যন্ত খারাপ ফলাফল করেছে। এর মধ্যে বিজেপি কয়েকজন নেতা-নেত্রীর মন্তব্য রাজ্যজুড়ে তুমুল বির্তক তৈরি করেছে গত কয়েক মাস ধরে। এর পরও অবশ্য রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা বিহার নির্বাচনের আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন, বিহারের মডেলই নির্বাচন হবে পশ্চিমবঙ্গে। এমনকি এ মাসের শেষ দিকে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র রাজনৈতিক সভা শুরুর মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুর করবে বিজেপি। তবে বিহার নির্বাচনে বিজেপির হারের পর কলকাতায় অমিত শাহ’র সেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কোনও পরিবর্তন আসবে কিনা সেটা এখনও বিজেপি থেকে নতুন করে জানানো হয়নি।
এ নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিজেপি কোনই পশ্চিমবঙ্গে জায়গা পায়নি। আগামীতেও পাবে না। বিহারের বহু হুংকার করেছিল তারা, কিন্তু সেখানে ওদের গো-হার হতে হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী মনে করেন বিজেপিকে রাজ্য পথ চিনিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসই। নইলে বিজেপিকে রাজ্যে কেউ চিনত না। বিহারের মানুষ মোদিকে রুখে দিয়েছে। বাংলায় ওদের জায়গা নেই।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু মনে করেন, বিহারের মোদিজির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দিদিজিরও বিদায় নিতে হবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে রাজ্যবাসী বিজেপির মতোই প্রত্যাখান করবে।