Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

14খোলা বাজার২৪ ॥বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫: পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমান ও তার দুই বন্ধুর বিচারের রায় জানা যাবে বৃহস্পতিবার।
ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ৪ নভেম্বর তিনিই রায়ের এ দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।
২৭ মাস আগে এই হতাকাণ্ড এবং তাতে রহমান দম্পতির কিশোরী মেয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই ঘটনা এখনকার শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা এবং তাতে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছিল, তেমনি ঐশীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ‘দায়িত্বহীন’ আচরণ হয়েছিল সমালোচিত।
ঐশীর দুই বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি ও মিজানুর রহমান রনিকে এ মামলায় হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে জনি শুরু থেকেই কারাগারে আছেন। আর রনি মাঝখানে জামিনে থাকলেও রায়ের দিন ঠিক করে দিয়ে বিচারক তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ মামলায় ঐশীদের বাসার শিশু গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। গত বছরের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। পরে গ্রেপ্তার করা হয় রনি ও জনিকে।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তাতে বলা হয়, বাবা-মা’কে ঐশীই হত্যা করেন; আর অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। তবে তিনি মনে করেন, ঐশী তার বাবা-মা’কে খুনে করেনি।
তদন্তের মধ্যে ঐশী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে বলেন, ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। বাবা-মা যখন খুন হন তখন তিনি বাসায় ছিলেন না, কারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাও তিনি জানেন না।
অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী ঐশীর বয়স বিদ্যালয়ের নথি অনুযায়ী ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে শিশু আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বয়সের সমর্থনে খুলনার একটি ক্লিনিকের জন্মসনদও আদালতে দাখিল করেন ঐশীর আইনজীবী।
এরপর আদালতের নির্দেশে গতবছর ২০ অগাস্ট ঐশীকে পরীক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানানম এই কিশোরীর বয়স ১৯ বছরের মতো।
গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠন করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলে গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকার তিন নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম সাজেদুর রহমান আবারও অভিযোগ গঠন করেন এবং ঐশীদের বিচার শুরু করেন।
বাদীপক্ষে ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ঐশীর চাচাসহ ৩৯ জনের জবানবন্দি শোনে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান এবং আসামিপক্ষে ফারুক আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান রানা গত ২০ অক্টোবর ও ৪ নভেম্বর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
গত ১৩ অক্টোবর মামলার প্রধান আসামি ঐশীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় আদালত। সে সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন ঐশী। অপর দুই আসামি জনি ও রনিও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
ঐশী খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করে তার আইনজীবী ফারুক আহম্মদ বলেন, “ঘটনার সময় ঐশী অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। আর ঘটনার দিন তিনি মদ্যপ অবস্থায় বন্ধুর বাসায় ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফয়সাল ভূঁইয়া বলেন, “অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ঐশীর বয়স যে ১৯ বছর তা প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনার দিন সে মদ্যপও ছিল না। গৃহকর্মী সুমিও ঐশীকে দায়ী করে জবানবন্দি দিয়েছে।”
ঐশীসহ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছেন বলে বাদীপক্ষের এই আইনজীবী জানান।