খোলা বাজার২৪ ॥বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫: নিউইয়র্কে প্রথম সারির একটি সাময়িকীতে কাজ করতেন ডেবরা কোহেন। স্বামী শিক্ষকতা করেন। সাধ আর সাধ্যের মিল রেখে ভালোই চলছিল দুজনের সংসার। প্রথমবার মা হওয়ার পর আনন্দের শেষ ছিল না। তবে কপালে পড়েছিল চিন্তার ভাঁজ। ওর দেখাশোনা কে করবে?
সন্তানের কথা ভেবে কঠিন সিদ্ধান্তটি নেন কোহেন। কম্পিত হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর কোহেন নতুন জীবনে পা রাখেন।
অনেক মাকেই সন্তানের জন্য চাকরি ছাড়তে হয়। অনেকে ভাবেন, স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। হতাশায় ভোগেন। তবে কোহেনের গল্পটা আলাদা। তাঁর কোনো হতাশা নেই। ২৯ বছর বয়সে চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। আর এখন ৪৮ বছরের কোহেন জোর গলায় বলেন, ‘এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।’
চাকরি ছাড়ার পর সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন কোহেন ও তাঁর স্বামী। তাঁদের কোনো গাড়ি ছিল না। শখের বশে যা করতেন, সব বাদ দিয়েছিলেন। রেস্তোরাঁয় খাওয়াটা পছন্দের ছিল। কিন্তু সে কথা ভাবলে গায়ে জ্বর আসত। স্বামী বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পড়াতে শুরু করেন। এতেও টানাটানি কাটে না। কোহেন বুঝলেন অন্য কিছু ভাবতে হবে। ঘরে বসে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি এখানে সেখানে খোঁজখবর শুরু করেন। চুক্তিতে অন্দরসজ্জার কাজ শুরু করেন। আস্তে আস্তে ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। দুই মেয়েকে নিয়ে সফল ব্যবসায়ী কোহেন দারুণ খুশি।
কোহেন মনে করেন, দুই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারা তাঁর জীবনের বড় পাওয়া। অন্যের অধীনে থাকলে সন্তানদের তিনি এত সময় দিতে পারতেন না। সন্তানদের প্রথম হাঁটা, প্রথম কথা বলা, প্রথম দাঁত ওঠা—সবই উপভোগ করেছেন তিনি। তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে স্বাবলম্বীও হতে পেরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে র্যাদার অ্যান্ড কিট্রেলের অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ওয়েস ব্রাউন বলেন, সন্তান হওয়ার পর সংসারের খরচ বেড়ে যায়। ফলে মা-বাবা দুজনেই চাকরি করতে বাধ্য হন। এ সময় সন্তানেরা একা হয়ে যায়। তাদের লালনপালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় বলছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জনে একজন নারী সন্তান লালনপালনের জন্য ঘরে থাকতে বাধ্য হন। পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনে তিনজন নারী ঘরে থাকতে বাধ্য হন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে সন্তানের প্রয়োজনে বাবারা কম চাকরি ছাড়েন। যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান লালনপালনের জন্য যেসব মা-বাবা বাড়িতে থাকেন তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ পুরুষ। তবে সন্তান লালনপালনের জন্য বাবাদের ঘরে থাকার সংখ্যা বাড়ছে।
সন্তানের প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি, তাহলেই জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কোহেনের মতো সন্তুষ্ট থাকতে পারা যায়। সবার প্রথমে মাথায় রাখতে হবে আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি। ভাবতে হবে, চাকরি না করার সিদ্ধান্তটি স্বল্প না দীর্ঘমেয়াদি। যদি স্বল্পমেয়াদি হয়, তাহলে চাকরির বাজার সম্পর্কে নিজেকে ওয়াকিবহাল রাখতে হবে। সমসাময়িক ঘটনার খবর রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনের সময় চাকরি পাওয়াটা সহজ হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সাউথ পোর্টের অ্যাটলাস ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ব্রেট ইভানস বলেন, চাকরি ছাড়ার সময় পরবর্তী পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ঘরে থাকলেও চাকরির বাজারের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে। হাতের কাছেই রয়েছে ইন্টারনেটের বিপুল জ্ঞানভান্ডার। তাই কাজটা কঠিন নয়। তিনি আরও বলেন, চাকরি ছাড়ার আগে থেকেই একজনের উপার্জনে সংসার চালানোর অভ্যাস তৈরি করে নিতে হবে।
টরন্টোর সিমনস ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ের অর্থনীতিবিষয়ক পরিকল্পনাকারী শ্যানন লি সিমনস বলেন, সবার আগে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা।
বিবিসি অনলাইন অবলম্বনে