খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫: জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। আজকের লেখাটা দেশের অনলাইন নিউজ থেকে তুরে ধরা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
আমার জীবনটা কষ্টে ভরা আপু। আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন পারিবারিক একটা ঝামেলার মধ্যে আমার বিয়ে হয়। আমার বাবা মা আমার বিয়ে দিতে চাননি কিন্তু এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা হয়। কিন্তু বিয়ের পরও আমি আমাদের বাড়িতেই ছিলাম চার/পাঁচ বছর। এমনকি বরের সাথে দেখাও হয়নি। তবে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো। আমার শ্বাশুড়ী ক্যানসারের পেশেন্ট ছিলো। বিয়ের পর তারা আমার তেমন একটা খোঁজ খবর নিতোনা। আমার বাবা মা বলেছিল আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে। কিন্তু আমি দেইনি। ভেবেছিলাম আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই তো হবে।
আমি ডিভোর্স দেয়া পছন্দ করিনি। কিন্তু আমার বরটা ভাল ছিলো না। অ্যাডিক্টেড ছিলো আমি তা জানতাম না, বুঝতামও না। আমি যখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন আমি আমার বরের প্রেসারের কারণে মা বাবার অবাধ্য হয়েই একরকম তার সাথে সংসার শুরু করি। আমার বরটা ছিলো উড়নচন্ডী, অ্যাডিক্টেড। বাসায় ঠিকমতো আসতোনা। সবসময় আমার সাথে বাজে ব্যবহার করতো। আমি কোনো প্রতিবাদ করলে গায়ে হাত তুলতো। এরমধ্যেই আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই। বাচ্চা না রাখতে চাইলেও রাখতে হয়। কিন্তু বাচ্চা হবার পরও আমার বরের স্বভাব পাল্টায়না। সে বরং আগের চেয়ে আরও বেশি বেশি নির্যাতন করতো। অনেক কষ্ট করে বাচ্চা, সংসার, বাজার, পড়াশোনা একা হাতে সামলাতাম আমি। এক পর্যায়ে তার এসব আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আমি তাকে ডিভোর্স দেই।
মেয়েকে আমার মায়ের কাছে দিয়ে আমার মাস্টার্স কমপ্লিট করি। মেয়ের বয়স এখন পাঁচ। এখনো আমার কোনো জব হয়নি। ডিভোর্সের চার বছর হবার পরেও আমি কোনো ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াইনি মেয়ের এবং আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে। কয়েকদিন আগে একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার বউ মারা গেছে ক্যান্সারে কয়েকমাস আগে। একটা মেয়ে আছে তার অনেক ছোট। সে প্রচন্ড আপসেট। আমি মানবিকতার খাতিরে তাকে বিভিন্ন সান্ত্বনা, কথাবার্তায় স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। কয়েকমাস ফোনে কথা বলায় সে এতটাই পাগল হয় আমার জন্য যে আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমাকে দেখতে আমাদের বাড়িতে আসতে চায়। তার অনেক বন্ধু বান্ধবদের কাছে শুনেছি সে খুব ভাল মানুষ। প্রথম প্রথম না চাইলেও আমার প্রতি তার অনুরক্তি, তার ভাল মানুষি দেখে আমিও তাকে ভালবেসে ফেলি। আমার বাসায় তার কথা জানাই। বাবা মা সবকিছু শুনে তাকে বাসায় আসতে বলেন। সে আমাদের বাড়িতে একদিন থাকে। আমরা তাকে যথেষ্ট আপ্যায়নে র চেষ্টা করি। সে আমাদেরকে যথেষ্ট পছন্দ করে। আমার বাবা কাকাকে তার ফ্যামিলির সবার ঠিকানা, ফোন নম্বর দেয় এবং খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা পাকাপাকি করবে এটা জানায়। আমার বাসার সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। সে আমাদের বাসা থেকে চলে যাবার পর আরও একবার আমার সাথে দেখা করতে আসে। সবকিছু ভাল এবং সুন্দর ভাবেই হয়।
তার মায়ের সাথে এরমধ্যে একদিন আমার কথাও হয় এবং তার ইচ্ছার বাইরে তার ফ্যামিলির কেউ কিছু চায়না এটাও জানায়। তার মা ভাইরা আমার সাথে কথা বলে। খুব কোঅপারেটিভ তারা। সবকিছুই ভাল। এরমধ্যে একটা প্রবলেম হয়ে যায়ৃ
সে একটা ট্যুরে যাবার কথা আমাকে বলেছিল। আমি তার ভালো র জন্যেই তার কিছু সমস্যার জন্য তাকে যেতে নিষেধ করি এবং আমার সাথে সময় দেবার জন্য রিকোয়েস্ট করি। সে অজুহাত দেখিয়ে আমার কাছ থেকে যায় এবং মিথ্যা বলে সেই ট্যুরে যায়। তার যাওয়াটায় আমার কোনো প্রবলেম ছিলো না কিন্তু সে যে আমাকে মিথ্যা বললো এবং আমার রিকোয়েস্টটা অগ্রাহ্য তো করলোই, এমনকি তার যাবার ব্যপারটাও সে আমাকে বললোনা। এতে আমি হার্ট হই এবং রাগ করে তাকে কয়েকটা কথা বলি। এরপর থেকে আর সে আমার ফোন রিসিভ করেনা, আমার সাথে কথা বলেনা আজ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। আমি কষ্টে দিশেহারার মত, কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাচ্ছি। সে আমার সাথে যোগাযোগ করেনা। তার ফ্যামিলির সাথে আমার যোগাযোগ আছে। তার মায়ের সাথে কথা হয়। ভাইদের সাথে কথা হয়। ভাইরা, মা তাকে আমার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে এড়িয়ে যায়। বলে সমস্যা আছে। ভাইকে বলে যে মেয়ে বিয়ের আগেই আমার সাথে এমন করতেছে সে বিয়ের পর না জানি কি করবে, আমার মানসিক সমস্যা আছে। এসব বলছে।
আমি খুব কষ্টে আছি আপু বুঝতে পারছিনা কী করবো। দুটা মাস চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিশ ঘন্টাই সে আমার সাথে কথা বলতো সারাদিন, সারারাত। আমি কিছুতেই থাকতে পারছিনা আপু। এদিকে আমার ফ্যামিলি ওর কথা জানতে চায়। আমি কী করবো, কী বলবো। এক মুহুর্তের জন্য তাকে ভুলতে পারছিনা। এতদিন সে আমার সাথে এত এত কথা বলেছে, আমার জন্য এত পাগল ছিলো, তার উপর এতটুকু রাগ দেখানোর অধিকার কি আমার নেই? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। পাগল হয়ে যাচ্ছি। সে আমার সাথে সরাসরি কিছু বলছে না, কোনো রকম যোগাযোগই সে রাখছে না আমার সাথে। ভালবাসা, বিশ্বাস কি এত ঠুনকো হয়?”
পরামর্শ:
আপু, আপনি অতীতে ভুল করেছেন এবং আমার মনে হয় এখনো ভুল করছেন। এই লোকটির জন্য এতটা উতলা হওয়া আপনার উচিত হচ্ছে না। তিনি যে আপনাকে খুব ভালোবাসেন, সেটাও আমার মনে হচ্ছে না। কেন এমন মনে হচ্ছে আপনাকে বলিৃ
একটি সহজ জিনিস আপনি ভেবে দেখুন, যে মানুষটির স্ত্রী ক্যান্সারে ভুগে মারা গিয়েছেন মাত্র কয়েকমাস, সে মানুষ কীভাবে আরেকজনের সাথে এত সহসা প্রেম করে ফেলতে পারেন? প্রেম তো প্রেম, একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে বিয়ের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়ে যায়। এর অর্থ কী? প্রাক্তন স্ত্রীর জন্য তাঁর মাঝে কি কোন আবেগই কাজ করে না? চক্ষুলজ্জায় পড়ে হলেও মানুষ অন্তত ১ বছর সময় তো নেয়। আমার মনে হয় এটা ভালোবাসা না, তিনি স্রেফ কেবল একজন স্ত্রী খুঁজছেন যে তাঁর সংসার সামলাবে।
এই ধারণাটা আরও পাকাপোক হচ্ছে তাঁর পরবর্তী আচরণে। যে মানুষ এখনোই আপনার অনুরোধের দাম দেয় না, তিনি ভবিষ্যতে আপনাকে বা আপনার মেয়েকে কী দাম দেবেন? তিনি মিথ্যা বলেছেন, সেটার চাইতেও বড় হচ্ছে নিজে দোষ করেও আপনাকে দোষী বানিয়ে তিনি সম্পর্ক ভাঙতে উদ্যত হয়েছেন। যিনি এখনোই এত মেজাজ দেখাচ্ছেন, বিয়ের পর তাঁর আচরণ কিন্তু আরও খারাপ হবে। পরিবারকে যা সত্য সেটা বলাই ভালো হবে। আর আপনি মাথা ঠাণ্ডা করুন। মাথা ঠাণ্ডা করে সিদ্ধান্ত নিন। ভদ্রলোক যদি নিজে থেকে এসে আপনার কাছে ক্ষমা না চায়, তাহলে এই সম্পর্ক বিয়েতে গড়িয়ে নেয়া একেবারেই উচিত হবে না বলেই আমি মনে করি।