খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫: জয় দিয়েই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। এক সময়ে বিপদে পড়ে গেলেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ম্যালকম ওয়ালারের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ের পরও তিন বল বাকি থাকতে ১৩১ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই রান আউট হয়ে ফিরে যান এনামুল হক।
সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তিন নম্বরে নামেন সাব্বির রহমান। তামিম ইকবালের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন তিনি।
১৮ রান করে সাব্বিরের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম তাকে দ্রুত অনুসরণ করলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
মুশফিককে ফেরানো গ্রায়েম ক্রেমার বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন একাদশ ওভারে। জোড়া আঘাতে নাসির হোসেন ও তামিমকে ফিরিয়ে দেন তিনি। গুগলি বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাসির। আর বলের লাইনেই যেতে পারেননি তামিম।
৮০ রানে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশ ঘুরে দাড়ায় মাহমুদউল্লাহ ও লিটন দাসের ব্যাটে। তাদের ৩৮ রানের জুটি দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে।
১২ বলে ১৭ রান করে লিটনের বিদায়ের পর বাকি কাজটুকু মাশরাফিকে নিয়ে সহজেই সারেন মাহমুদউল্লাহ। ২২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া মাশরাফি অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে।
২৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার ক্রেমার।
এর আগে মাশরাফি ও আল আমিন হোসেনের দারুণ বোলিংয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। প্রথম তিন ওভারে একটি করে উইকেট হারায় অতিথিরা।
মাশরাফির করা প্রথম ওভারে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে লিটন দাসের তালুবন্দি হন সিকান্দার রাজা।
দ্বিতীয় ওভারে কোনো রান না করেই আল আমিনের বলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষ-ব্যাটসম্যান রেগিস চাকাভা।
শূন্য রানে ফিরেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরাও। মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
১০ রানে তিন উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভিনের ব্যাটে। ব্যক্তিগত ৫ রানে মুস্তাফিজুর রহমানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান উইলিয়ামস। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। নাসির হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি।
নবম ওভারে ৩৮ রানে চার উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ম্যালকম ওয়ালার। নেমেই দারুণ সব শট খেলে রানের গতি বাড়ান এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
বাঁহাতি কোনো স্পিনার ছাড়াই এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ। আরাফাত সানিকে বসিয়ে এই ম্যাচে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে খেলায় স্বাগতিকরা।
অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারে ১৭ রান দেন জুবায়ের। তার বলে একটি চার, দুটি ছক্কা হাঁকানোর পর এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে থাকেন ওয়ালার। নাসিরের করা পরের ওভারে দুটি করে ছক্কা-চারে ২০ রান নেন তিনি।
আরভিনের সঙ্গে ওয়ালারের বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। তার বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আরভিন বোল্ড হলে ভাঙে ৩৪ বল স্থায়ী ৬৭ রানের জুটি।
প্রথম ওভারে ১৭ রান দিলেও ২০ বছর বয়সী জুবায়েরের ওপর আস্থা হারাননি মাশরাফি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন জুবায়ের। তার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লুক জংউই। এরপর লং অফে নাসিরের তালুবন্দি হন নেভিল মাডজিভা।
জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নেওয়া ওয়ালারকে ফেরানোর কৃতিত্ব মুস্তাফিজের। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটনের সহজ ক্যাচে পরিণত হন ৬৮ রান করা ওয়ালার। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অর্ধশতক পাওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৩১ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি ছক্কা ও চারটি চারে।
২০ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান ওয়ালার। টি-টোয়েন্টিতে এটাই জিম্বাবুয়ের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম অর্ধশতক।
১৯তম ওভারে বোলিং এসে আঘাত হানেন আল আমিন। গ্রায়েম ক্রেমারকে বোল্ড করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন এই পেসার।
শেষ ওভারে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ১৩১ রানে অতিথিদের থামিয়ে দেন মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজ, মাশরাফি, আল আমিন ও জুবায়ের দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ১৯.৩ ওভারে ১৩১ (রাজা ৪, চাকাভা ০, উইলিয়ামস ১৫, চিগুম্বুরা ০, আরভিন ২০, ওয়ালার ৬৮, জংউই ০, মাডজিভা ১, চিশোরো ৭*, ক্রেমার ৩, পানিয়াঙ্গারা ৪; মাশরাফি ৪-০-২০-২, আল আমিন ৪-০-২০-২, মুস্তাফিজ ৩.৩-০-১৬-২, নাসির ৩-০-২৯-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-১-১৮-১, জুবায়ের ২-০-২০-২)
বাংলাদেশ: ১৭.৪ ওভারে ১৩৬/৫ (তামিম ৩১, এনামুল ১, সাব্বির ১৮, মুশফিক ২, নাসির ১৬, মাহমুদউল্লাহ ২২*, লিটন ১৭, মাশরাফি ১৫*; পানিয়াঙ্গারা ৩-০-২৫-০, মাডজিভা ৩-০-২৪-০, জংউই ১.৪-০-২৪-০, চিশোরো ৪-১-১৫-২, ক্রেমার ৪-০-২৯-৩, উইলিয়ামস ২-০-১৫-০)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।