Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

51খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৫: সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের চিপ থেকে বল যখন ভেসে আসছিল, ইংল্যান্ড গোলপোস্ট তখন তাঁর উল্টো দিকে। বলটা তাঁর মাথার ওপর এল, মারিও গাসপার লাফিয়ে উঠে উড়ন্ত ব্যাকভলি করলেন। ইংলিশ গোলরক্ষক জো হার্টকে দর্শক বানিয়ে বল জড়িয়ে গেল ডান কোণে। গোল!
কাল ইউরোপ জুড়ে অনেকগুলো প্রীতি ম্যাচের মধ্যে যদি শুধু একটা ‘মোমেন্ট অব দ্য ডে’ বেছে নিতে বলা হয় তবে সেটি গাসপারের এই গোলটাই। এমন দুর্দান্ত গোল যেকোনো ম্যাচ জেতানোর জন্য যথেষ্ট। ম্যাচের শেষ দিকে সান্তি কাজোরলার গোলটা স্পেনের জয় নিয়ে বাকি সংশয়টুকুও দূর করে দিল।
স্পেনের মতো হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে বেলজিয়ামও। ইতালিকে তারা হারিয়েছে ৩-১ গোলে। রবার্ট লেভানডফস্কির জোড়া গোলে পোল্যান্ড ৪-২ গোলে হারিয়েছে আইসল্যান্ডকে। আর গত কিছুদিনের অনভ্যস্ত কানে হয়তো একটু অচেনা ঠেকবে তথ্যটা – একটা ফুটবল ম্যাচে হল্যান্ড জিতেছে!
আলিকান্তেতে স্পেনের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসনের মনে হয়তো একটা গোপন আশা ছিল, ইউরোপের বড় দলগুলোর সঙ্গেও সমানে সমানে টক্কর দিয়ে যাবে দল। আগামী বছর ফ্রান্সের ইউরোতে অন্য দলগুলোর মতো তাঁর দলকেও সমান সমীহের চোখে দেখবে সবাই। এমনিতে এবারের ইউরো বাছাইয়ে সবগুলো ম্যাচে জিতেছে ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে অপরাজিত টানা ১৫ ম্যাচে। কিন্তু এর বেশির ভাগই এসেছে ‘পুঁচকে’ দলের সঙ্গে। এ জন্যই এবারের ইউরোর আগে প্রীতি ম্যাচগুলোতে বেছে বেছে শক্ত প্রতিপক্ষ নিয়েছিলেন। তাতে প্রথম ‘পরীক্ষায়’ একটু বাস্তবতার স্পর্শ পেল ইংল্যান্ড।
কাল শুরু থেকেই ইংলিশদের চেপে ধরেছিল স্পেন। প্রথমার্ধে বলের দখলই ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ। বুস্কেটস-আলকাসার-কস্তারা আরেকটু হিসেবি হলে হয়তো প্রথমার্ধেই গোলের দেখা পেয়ে যেত স্প্যানিশরা। তবে ইংলিশরাও মাঝে মাঝে চোখ রাঙাচ্ছিল ‘বাছাইপর্বের ইংল্যান্ড’ হয়ে ওঠার। বাঁ দিকে রায়ান বার্ট্রান্ড ও রাহিম স্টার্লিং বেশ তৎপর ছিলেন। কিন্তু স্পেন গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসকে দু-একটা সহজ সেভ ছাড়া আর তেমন কিছু করতে হয়নি।
হল্যান্ডকে জয়ের মুখ দেখাল রোবেনের এই গোল। ছবি: এএফপিদ্বিতীয়ার্ধেও একই চিত্রনাট্য। তবে এবার তাতে যোগ হয়েছে ওই গোল দুটো। প্রথমটি ছিল ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের অনুপম প্রদর্শনী। আর ম্যাচের শেষ দিকে কাজোরলার গোলটি ছিল দলীয় সমন্বয়ের দুর্দান্ত সমাপ্তি। অসাধারণ প্রেসিংয়ে ইংলিশদের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সের সামনে পেদ্রো-নলিতোর সমন্বয় পূর্ণতা পেল আর্সেনাল মিডফিল্ডারের পায়ে। ‘শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সম্মানজনক ফল’ পেয়ে ম্যাচ শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন স্পেন কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক।
তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেন মার্ক উইলমটসও। বিশ্বের এক নম্বর দল বেলজিয়ামের কোচ তিনি। আর ইতালির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও যে ৩-১ গোলের জয় তুলে নিয়ে ‘র‍্যাঙ্কিংয়ের মান’ রাখল বেলজিয়াম। নিছকই মজা করে বলা। এ ম্যাচকে তো ছাপিয়ে গেছে এক মর্মান্তিক ইতিহাস, যার সামনে নিছক একটা ফুটবল ম্যাচের জয়-পরাজয় মূল্যহীন। ১৯৮৫ সালে ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে লিভারপুল ও জুভেন্টাসের মধ্যে ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৩৯ জন দর্শক, যেটিকে পরিচিত হয়ে আছে ‘হেইসেল বিপর্যয়’ নামে। ওই ঘটনার ৩০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখার অনেক উপলক্ষের একটি ছিল কালকের ম্যাচ। যে কারণে ম্যাচের ৩৯ মিনিটের সময় দর্শকদের করতালির সঙ্গে যোগ দিতে এক মিনিট খেলা বন্ধ রাখেন খেলোয়াড়েরা।
এমন ম্যাচে জয়-পরাজয় দ্বিতীয় প্রধান বিষয়। তাতে বেলজিয়াম জিতল। অবশ্য ৩ মিনিটেই আন্তোনিও কান্দ্রেভার গোলে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। দশ মিনিট পরই বেলজিয়ামকে সমতায় ফেরান ইয়ান ভার্টোঙ্গেন। আর জয় তুলে নেয় ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে মিচু বাতসুয়েই আর কেভিন ডি ব্র“ইনের গোলে।
জয় পেয়েছে হল্যান্ডও। ইউরো থেকে বাদ পড়া ডাচরা নাটকীয় ম্যাচে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ওয়েলসকে। জোড়া গোল করেছেন আরিয়েন রোবেন। ম্যাচের ৭০ মিনিটের মধ্যে দুবার পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফিরে আসে প্রথমবারের মতো ইউরোতে জায়গা করে নেওয়া ওয়েলস। তবে ৮১ মিনিটে রোবেনের গোলটির আর কোনো জবাব ছিল না গ্যারেথ বেল-বিহীন দলটির।
২০১৪ সালে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে হল্যান্ডের জন্য প্রস্তুতির, ওয়েলস শুধু ‘প্রতিপক্ষ’ কোটা পূরণ করছিল। আর এবার ইউরোগামী ওয়েলসের প্রস্তুতিতে হল্যান্ড হয়ে থাকল ‘প্রতিপক্ষ’ হয়ে। সময় কীভাবে বদলায়, না! তথ্যসূত্র: ইএসপিএন।