খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: মধ্যপ্রাচ্যে আইএস এর বিরুদ্ধে এক বছর ধরে নিষ্ফল যুদ্ধের পর প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে নির্মূলে আরও সমন্বিত সামরিক উদ্যোগ নেওয়ার চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ ইতোমধ্যে প্যারিসের হামলাকারীদের ‘নির্দয় জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, “যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে জাতিকে আজ অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।”
আইএসএর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ‘যথেষ্ট চেষ্টা করছে না’ বলে ঘরে বাইরে অভিযোগ উঠছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। প্যারিসের হামলার পর ওয়াশিংটন এখন তাদের ইউরোপীয় ও আরব মিত্রদের নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক শক্তি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিকে বাধ্য হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার বিশাল ভূখণ্ড দখলে নিয়ে খেলাফত কায়েমের ঘোষণা দেওয়া ইসলামিক স্টেট বা আইএস গত দুই বছরে পুরো বিশ্বের জন্যই বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গতবছর থেকে আইএস এর অবস্থানে আকাশপথে যে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে, শুরু থেকেই তার সঙ্গে রয়েছে ফ্রান্স।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করে এইএস বলেছে, “ফ্রান্স যতক্ষণ ক্রুসেড পরিচালনা থেকে এবং আমাদের নবী মোহাম্মদ ও মুসলিম খিলাফতের ভূমির উপর বিমান হামলা থেকে সরে না দাঁড়াবে ততোক্ষণ ইসলামিক স্টেটের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর তালিকার শীর্ষে থাকবে তারা।”
উইকএন্ডের সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে একটি কনসার্ট হল ও স্টেডিয়ামসহ পাঁচটি স্থানে অ্যাসল্ট রাইফেল ও বোমা নিয়ে ওই হামলায় নিহত হয়েছেন ১২৯ জন। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসে এতবড় হত্যাকাণ্ড আর ঘটেনি।
গত কয়েক সপ্তাহে দুটি ঘটনার পর আইএস এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিয়া অধ্যুষিত বৈরুতে জোড়া আত্মঘাতি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। আর মিশরের সিনাইয়ে রাশিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ২২৪ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর দিয়ানে ফেইনস্টেইন বলেন, “ইরাস ও সিরিয়ায় স্থানীয় স্থল বাহিনীর সমর্থনে সীমিত আকারে বিমান হামলার যে কৌশল নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কাজ করছেন, তা আর কাজে দিচ্ছে না- এটা স্পষ্ট। আমাদের দেশ এবং আমাদের মিত্রদের রক্ষায় তা যথেষ্ট নয়।”
তিনি বলেন, “ইরাক ও সিরিয়া ছাড়িয়ে যুদ্ধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কাজেই আমাদেরও তাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।”
ওবামার সাবেক উপদেষ্টা ব্র“স রিডেল, যিনি একসময় সিআইএর বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তার মতে, আইএস কেবল ইরাক ও সিরিয়া নিয়েই মনোযোগী থাকবে কি না- সেই প্রশ্নের অবসান হয়েছে প্যারিসে হামলার পর।
“পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমার মনে হয়, এখন আর এ বিতর্কের প্রয়োজন নেই।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও আইএসবিরোধী যুদ্ধে ওয়াশিংটনের আরও শক্ত অবস্থানের পক্ষে মত দিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার পর ইরাক যুদ্ধের সূচনা করা জর্জ এইচ ওয়াকার বুশের ছেলে জেব বুশ বলেছেন, “ইসলামী জঙ্গিরা পশ্চিমা সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।