Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

14খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: আজ ১ অগ্রহায়ণ, হেমন্তকালের প্রথম দিন। এদিনকে বলা হয় নবান্ন। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকমের খাবার; বাড়ির আঙিনা নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর কৃষক রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান কেটে নিয়ে আসে ঘরে। ধান ভাঙার গান ভেসে।
কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতিতে অভিভূত হয়ে তার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন এভাবেৃ
আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।
ফসল নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় বলেছেন,
চারিদিকে নুয়ে পড়েছে ফসল
তাদের স্তন থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল,
প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে -থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাড়ারের দেশে।
শস্যভিত্তিক এই লোক উৎসবে আজ মেতে উঠবে পুরো বাংলা। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে বাংলার কৃষকরা এই উৎসবটি পালন করে থাকে।
নবান্ন উপলক্ষে এই বাংলায় প্রচলিত আছে অনেক আচার অনুষ্ঠান। এখনও কুষ্টিয়ায় আখের গুড় ও নারকেল সহযোগে নতুন ধানের আতপ চালের ক্ষীর রান্না করে প্রতিবেশীদের খাওয়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোতে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে পিঠা-পায়েস খাওয়ানো হয়। নাইওর আনা হয় মেয়েকে।
খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে কৃষকরা মইয়না শাইল ধানের চাল দিয়ে এই উৎসব পালন করে। নেত্রকোনার হাজংরা হাতিবান্দা ধান দিয়ে ও মান্দিরা মিদিম ধানের চাল দিয়ে নবান্ন করে। এছাড়াও শেরপুর অঞ্চলের কোচ জনগোষ্ঠী পুরাবিনি ধান দিয়ে নবান্ন উৎসব করে।
রামবাংলার প্রকৃতিতে এখন কুয়াশার খেলা, ভোরের আলো ফুটতেই জেগে উঠে চারিপাশ। কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দ। কারণ, গোলায় উঠছে পাকা ধান।
চিরায়ত বাংলার চিরচেনা রূপ এটি। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে এখনও সোনারঙা ধানের ছড়াছড়ি। কিন্তু আমন ধান কাটার
উৎসবটা শুরু হয়ে গেছে আরও আগেই। কৃষক রাশি রাশি সোনার ধান কেটে নিয়ে এসেছে ঘরে। ঢেঁকির তালে মুখর হচ্ছে বাড়ির আঙিনা।
নবান্ন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসবে মেলা। সে মেলা পরিণত হবে গ্রামবাংলার মিলন মেলায়।
নবান্ন উপলক্ষে আজ ঢাকায় রয়েছে জাতীয় নবান্ন উৎসব-১৪২২। জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসব-১৪২২ উদযাপিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়।
সকাল ৭টা ১ মিনিট থেকে অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়ে সকাল ৯টায় নবান্ন শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
উৎসবে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নবান্ন শোভাযাত্রা, আলকাপ, ধামাইলসহ বিভিন্ন পরিবেশনা থাকবে। থাকবে ঢাক-ঢোলের বাদন আর মুড়ি-মুড়কি, পিঠার আয়োজন।