খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫ স্থপতি লুই আই কানের নকশা বিনষ্ট করে যারা সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপনা তৈরি করেছে, তাদের জবাবদিহি করতে হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। আজ সোমবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সম্পর্কে সরকারি দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ ভবন এলাকার জন্য লুই আই কান যে নকশা করেছিলেন, তা আমাদের কাছে আছে। নকশায় কোনো কবরস্থানের অস্তিত্ব নেই। তবুও আমরা মূল নকশা আনানোর চেষ্টা করছি। সে অনুযায়ী সংসদ ভবন এলাকাকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে অনেক বিখ্যাত লোক আছেন। তাঁদের কেউ মারা গেলে তাঁকে কি সংসদের সবুজ চত্বরে কবর দিতে হবে? আমি চট্টগ্রামের জন্য অনেক কাজ করেছি। তাই বলে কি আমাকে চট্টগ্রামের এম আজিজ স্টেডিয়ামের মধ্যখানে কবর দিতে হবে? যারা নকশার বাইরে কাজ করেছেন তাদের জবাবদিহি করতে করতে হবে।’
ফজিলাতুন নেসার মৌখিক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, লুই আই কানের মূল নকশা হাতে পেলেই সংসদ ভবনসহ এর আশপাশের এলাকার সব স্থাপনা সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশনায় বিভিন্ন সময়ে সংসদ ভবন চত্বরে কবর গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় লুই আই কানের সকল নকশা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাফেজখানা (আর্কাইভ) থেকে সংগ্রহের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
জাসদের সাংসদ শিরীন আখতারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা কারও কবর এখানে থেকে তুলে নিয়ে যাব না। লুই কান যা চেয়েছেন, বা তার নকশায় যা আছে, আমরা সেখানে ফিরে যাব। তাজমহল রক্ষার জন্য ভারত সরকার সবকিছু করছে। আমরাও লুই কানের নকশা বাস্তবায়নে সব করব।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর ছাড়াও সংসদ ভবন এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের কবর রয়েছে।
এই আটটি কবর ছাড়া শেরেবাংলা নগরে আছে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরও সাতটি স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে বড় স্থাপনা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বি আইসিসি), স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন। এর বাইরে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরের চারদিকে থাকা চারটি প্রবেশপথের শুরু বা শেষ প্রান্তে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, সম্মেলন কেন্দ্র ও মসজিদসহ চারটি স্থাপনা। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ মারা গেলে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সংসদ ভবনের ‘জাতীয় কবরস্থানে’ দাফন করার জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু তাতে সম্মতি দেওয়া হয়নি। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবন সীমানার পূর্ব প্রান্তে আসাদগেটের উল্টো দিকের পেট্রলপাম্পটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তখনকার মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ভাইকে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।