খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫: সাদা লেসের গাউন পরে মঞ্চে হেঁটে আসছে কনে। মুখ ঢাকা লেসের ওড়না দিয়ে। তাতে হয়তো সাদা পাথরেরই কাজ। চুল খোঁপা করা লেসের ব্যান্ড দিয়ে। চলচ্চিত্রে এ রকম দৃশ্য দেখে লেসের পোশাক পরার স্বপ্ন দেখেছেন অনেকেই। ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটনের বিয়ের সাদা লেসের গাউনটি দারুণ প্রভাব ফেলেছে বিয়ের পোশাকের ফ্যাশনে। অতীতে অভিজাত পরিবারের পোশাক হিসেবেই প্রচলিত ছিল এটি। প্রচুর ঘের দেওয়া লেসের গাউন দেখলেই যেন মনে পড়ে নববধূ কিংবা রাজকন্যার কথা।
.এখন ফ্যাশনে লেসের পোশাক এসেছে নানাভাবে। জমকালো বা সন্ধ্যার পার্টি পোশাক থেকে শুরু করে রোজকার ব্যবহারের টপ, শার্ট, জ্যাকেট কিংবা ক্যাজুয়াল গাউনও চলছে। পুরো পোশাকটি লেসের তৈরি কিংবা লেসের কারুকাজ—দুই-ই দেখা যায়। পশ্চিমা পোশাকের স্টাইলে লেস এখন বেশ জনপ্রিয়। অতীতের ঘের দেওয়া লেসের গাউনের চাহিদা এখন তেমন নেই, বরং গাউনেই এসেছে ছিমছাম, স্মার্ট লুক। এ ছাড়া খাটো, চাপা ফিটিংয়ের ফ্রক কিংবা টপের চাহিদাও বেশ। শিফট ড্রেস থেকে পেনসিল স্কার্ট—সব ধরনের পোশাকেই লেসের ব্যবহার চলছে। আবার হয়তো শুধু গলার কাছে লেসের সূক্ষ্ম কারুকাজই আপনার পোশাকটি একদম আলাদা করে তুলবে।
রঙে চিরকালীন সাদা, কালো, লাল তো আছেই। এ ছাড়া মুহূর্তে ধূসর, সমুদ্র নীল, প্যাস্টেল নীল, হলুদ বা গোলাপি রঙের লেসের টপও অনেকেই পছন্দ করছেন। সাদা-কালোর ডিজাইনার তাহসিনা শাহীন বলেন, লেসের টপ বা ফ্রক কেনার সময় ভেতরের কাপড় যেন লেস না হয়ে আরামদায়ক কোনো কাপড় হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে।
গাউন, ফ্রক, টপ, শার্ট–লেসের পোশাকে বৈচিত্র্যও বেশঅভিনয়শিল্পী বা মডেলরা রেড কার্পেটে হাঁটার সময় বা গুরুত্বপূর্ণ সান্ধ্য অনুষ্ঠানগুলোতে নজর কাড়তে বেছে নিচ্ছে লেসের টপ কিংবা শর্ট ফ্রক। কথা হয় মডেল ও অভিনয়শিল্পী পিয়ার সঙ্গে। ‘লেসের টপের সঙ্গে জিনস কিংবা স্কার্ট পরে নেই। কোনো অনুষ্ঠানে স্লিভলেস পোশাকের ওপরে ছোট একটি লেসের কোটি ব্যবহার করি আর নিয়মিত ব্যবহারের জন্য শ্রাগস পরি।’ বললেন পিয়া। পার্টিতে সাদা লেসের টপ পরতে বেশ পছন্দ করেন বলেও জানালেন।
আরেকজন মডেল, যিনি নিজেই লেসের টপ বানিয়ে পরে থাকেন, তিনি শাহতাজ মনিরা হাশেম। ‘ক্লাসে যাওয়া, শপিং কিংবা যেকোনো আড্ডায় আমি লেসের তৈরি ঢিলেঢালা টপ পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখন শীত প্রায় চলে এসেছে বলে উলের লেসও ব্যবহার করি।’ জানালেন তিনি। গত ঈদে নিজেই নকশা করে লেসের একটি পোশাক বানিয়েছিলেন। ‘নিচে শিফনের কাপড় দিয়ে স্কার্ট আর ওপরে সাদা লেসের ক্রপ টপ বানিয়ে আমি খুব প্রশংসিত হয়েছি।’ বললেন শাহতাজ।
অনলাইন শপ ওপাল ফ্যাশন ওয়্যারের পরিচালক রুবাইযা দীপা বললেন, লেসের পোশাকের মধ্যে দুটি ধরন এখন বেশ জনপ্রিয়। একটি হলো ব্যাকলেস বা পিঠখোলা, ফুলহাতা স্টাইল। আর অন্যটি হলো পোশাকের ওপরের অংশে লেস এবং নিচে নেটের ব্যবহার। তবে ডিজাইন যা-ই হোক না কেন, শর্ট টপ বা ফ্রক এখন সবচেয়ে বেশি চলছে।
নিজের নকশায়
পুরোনো লেসের শাড়ি কেটে ফ্রক বা স্কার্ট বানিয়ে নিতে পারেন। ডিজাইনার তাহসিনা শাহীন বলেন, এ ক্ষেত্রে সিল্কের নেট বা লেসের কাপড় বেছে নিতে হবে। কারণ, সিনথেটিক হলে তা ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। চাইলে আপনি আপনার টপ বা ফ্রকে অ্যাপ্লিক, প্যাচওয়ার্ক, কর্ডিং, জারদৌসি এমনকি হ্যান্ড এমব্রয়ডারিও করতে পারেন।
ঢাকার চাঁদনী চক বা ইসলামপুর থেকে লেসের কাপড় কিনে পোশাক বানাতে পারেন। নানা রং ও নকশার বৈচিত্র্য পাবেন এখানে।
লেসের পোশাক বৈচিত্র্য
লেসের কাপড়ের জাম্পস্যুট এখন চলছে বেশ। লেসের তৈরি জ্যাকেট তো ফ্যাশন অনুরাগীদের কাছে বরাবরই পছন্দ। দিনের কোনো অনুষ্ঠানে বেছে নেওয়া যেতে পারে লেসের পালাজ্জো প্যান্ট।
পোশাকের পাশাপাশি বেছে নেওয়া যেতে পারে লেসের কাজ করা ক্লাচ ব্যাগ, চুলের নানা অনুষঙ্গ। অথবা খাটো কোনো পোশাকের সঙ্গে বেছে নেওয়া যেতে পারে লেসের কাজ করা জুতাও। লেসের তৈরি গয়নাও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়।
কোথায় পাওয়া যাবে
আর এই লেসের টপ বা ফ্রকগুলো পাওয়া যাচ্ছে ইয়েলো, ক্যাটস আই, একস্ট্যাসি, ড্রেসিডেল, সিকোসো, আড়ং, রঙ, বিবিয়ানা, অঞ্জন’স ইত্যাদি দোকানে। পাশাপাশি নগরের গাউছিয়া, নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, বনানী মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্কেও রয়েছে। এ ছাড়া পাওয়া যায় ফেসবুকে ওপাল ফ্যাশন ওয়্যার, জিভা ওমেনসহ নানা পেজে।
দরদাম
ডিজাইনের ভিত্তিতে শোরুমগুলোতে ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে লেসের টপ ও ফ্রক পাওয়া যায়। অনলাইন ওপাল ফ্যাশন ওয়্যারে ১৮০০-২২০০ টাকা, জিভা ওমেনে ১৪০০-২০০০ টাকা এবং বিভিন্ন শপিং মলে দাম শুরু হবে ৬০০-৭০০ টাকা থেকে।