খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫: ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই এম এ মতিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান এ আদেশ দেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আসামিকে আজ আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আসামি পক্ষ এ সময় তাঁর জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নাচক করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় প্রথম দফায় মতিনকে আট দিনের ও দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এ হত্যা মামলায় মতিনসহ এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এঁদের মধ্যে তামজিদ আহম্মেদ রুবেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে রাসেল চৌধুরী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২৬ অক্টোবর এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, জবানবন্দিতে রাসেল চৌধুরী বলেন, কাইয়ুম কমিশনারের ভাই এম এ মতিনের নির্দেশে বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হয়েছে। এ কাজের জন্য তাঁকে মতিন পাঁচ লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন। মতিন বিদ্যুতের ঠিকাদারি করতেন। ২০০১ সালে মতিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কর্মী হিসেবে সহযোগিতা করতেন। মতিন তাঁকে কোনো কাজ দিলে তা তিনি দায়িত্ব নিয়ে পালন করতেন। কাজ না থাকলে মাঝেমধ্যে মতিনের কাছ থেকে টাকাপয়সা আনতেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর মতিন তাঁকে ডেকে নিয়ে বলেন, একটি কাজ করে দিতে হবে। কাজটি করতে পারলে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কী কাজ করতে হবে জানতে চাইলে মতিন তাঁকে বলেন, গুলশান এলাকায় বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হবে।
রাসেল চৌধুরী জবানবন্দিতে বলেন, তিনি মিনহাজুল আরেফিনকে বলতে বলেন। পরে তাঁর কথামতো মিনহাজুল ঠিক করেন তামজিদকে। এরপর তাঁর (রাসেল চৌধুরী) বাসায় হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তিনি ও মিনহাজুল ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে ফুটপাতে সিজার তাবেলাকে দেখিয়ে দেন। তামজিদ গুলি করে সিজারকে হত্যা করেন। ঘটনার পর তাঁরা চলে আসেন। তিনি ভাঙারি সোহেলের কাছ থেকে অস্ত্র জোগাড় করেছিলেন। কাজ হয়ে যাওয়ার পর তা তাঁকে ফিরিয়ে দেন। মতিন এ জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেন। তিনি ওই টাকা থেকে মিনহাজুলকে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপর মতিন তাঁকে আর কোনো টাকা না দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
পুলিশ বলেছে, এর আগে মিনহাজুল ও শাখাওয়াতও আদালতে জবানবন্দিতে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মতিনের নাম বলেন। তামজিদ আদালতে তাঁর জবানবন্দিতে সিজারকে গুলি করার কথা স্বীকার করে বলেন, এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। রাসেল চৌধুরীকে তিনি বড় ভাই হিসেবে জানেন।
অবশ্য জবানবন্দি দেওয়া চারজনের পরিবারই প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি চাপের মুখে ওই চারজনকে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। তাঁরা বিদেশি হত্যায় জড়িত নন।
২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরের ফুটপাতে সিজারকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই তরুণকে গুলি চালিয়ে অপেক্ষমাণ এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে পালাতে দেখেছেন। সিজার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।