খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫: লিওনেল মেসি কি এল ক্লাসিকোতে খেলবেন? বার্সেলোনার নীতি নির্ধারকদের একটা বড় অংশই চাইছেন, মহা গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে খেলুন মেসি। আবার আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা চায় না মেসি এই ম্যাচটায় খেলুন।
উল্টো ছবিও আছে। ক্লাব ফুটবলের বিরতিতে জাতীয় দলগুলো প্রায়ই প্রীতি ম্যাচ খেলে। বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্থাগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস এই প্রীতি ম্যাচ। কিন্তু ফেডারেশনকে প্রচুর অর্থ এনে দেওয়া এই ম্যাচগুলো ক্লাবগুলোর কাছে ‘অর্থহীন’। এসব প্রীতি ম্যাচ নিয়ে তারা বিরক্তও। এই ম্যাচগুলো খেলতে গিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড়ের বাড়তি ধকল যায়, অনেকে চোটে পড়ে ক্লাবের ম্যাচে খেলতে পারে না। এই ম্যাচগুলোকে তাই বলা হয় ‘ফিফা ভাইরাস’।
ক্লাব বড়, নাকি জাতীয় দল? প্রশ্নটা পেশাদার ফুটবলে অনেক পুরোনো। ফুটবল ক্লাব কেন্দ্রিক খেলা। খেলোয়াড়দের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে ক্লাবের ওপরই। জাতীয় দলে বলতে গেলে তারা খেলে দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই। ক্লাব তার স্বার্থ দেখবে। কিন্তু সেই স্বার্থ দেখতে গিয়ে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের প্রস্তুতি বিঘিœত করা কতটুকু যৌক্তিক? ‘ক্লাব বড় নাকি জাতীয় দল’ প্রশ্নটাকে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এই প্রশ্নে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে—লাঞ্চ বড়, নাকি জাতীয় দল?
আজ বাংলাদেশের ফুটবল সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আয়োজন করতে চলেছে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ কখনোই এত বড় দলের মুখোমুখি হয়নি। আর সেই ম্যাচের আগের দিন শেখ জামাল ক্লাব জাতীয় দলের দশজন খেলোয়াড়কে এক রকম জোর করেই নিয়ে গেল মধ্যাহ্নভোজে। ‘জোর’ শব্দটাকে আরও স্থূলভাবে ‘হুমকি’ও লেখা যায়। ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদেরের ‘ব্যাখ্যা’টা যে এ রকম, ‘ওরা আমার খেলোয়াড়। আমি টাকা দিই। কাজেই আমি চাইলে ওরা আসতে বাধ্য। তা ছাড়া ম্যাচের পরদিনই চীন চলে যাবে জাতীয় দল। সময় নেই।’
আর্থিক শক্তি বিবেচনায় শেখ জামাল এখন দেশের সবচেয়ে বড় ক্লাব। জাতীয় দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তাদের দলে। এ কারণে তাদের দায়িত্বটাও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বাংলাদেশের ফুটবলের অপেশাদার সংস্কৃতি, ফেডারেশেনের ওপর ক্লাবগুলোর খবরদারির আরও একটা নজির হয়ে থাকল এই ঘটনা। সবচেয়ে কালো নজির সম্ভবত। জাতীয় দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে কোনো ক্লাব তাঁর খেলোয়াড়দের ক্যাম্প থেকে জোর করে নিয়ে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছে—এমন উদাহরণ ফুটবল ইতিহাসেই আছে কি না সন্দেহ!
শেখ জামাল সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, খেলোয়াড়দের তিনি সকাল দশটায় চেয়েছিলেন। দুপুর ১২টার মধ্যে ছেড়ে দিতেন। বাফুফে কেন খেলোয়াড়দের দুপুর তিনটায় পাঠাল, এ নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট তিনি। কিন্তু প্রতিপক্ষ যেখানে অস্ট্রেলিয়া; সেখানে মামুনুল, ইয়াছিন, ইয়ামিন, সোহেল রানা, কেষ্ট কুমার, রাজু, রনিদের মতো খেলোয়াড়দের ক্যাম্প থেকে নিয়ে গিয়ে ‘লাঞ্চ’ করানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? কাল ঠিক সময়ে এই ১০ খেলোয়াড় অনুশীলনও করতে পারেননি। যোগ দিয়েছেন অনেক পরে।
এই ‘বাধ্যতামূলক মধ্যাহ্নভোজে’র মেন্যু কী ছিল জানা যায়নি। তবে শেখ জামালের কর্তারা কাল কাঁটা চামচ ও টেবল নাইফ দিয়ে দিয়ে মাংসের টুকরো দ্বিখণ্ডিত করার সময় দেশের ফুটবলের স্বার্থকেও দ্বিখণ্ডিত করেছেন, সন্দেহ নেই!
খেলোয়াড়ের দায় নেই। মনজুর কাদেরের বক্তব্যেই লুকিয়ে আছে খেলোয়াড়দের অসহায়ত্ব, ‘আমি টাকা দিই। কাজেই আমি চাইলে ওরা আসতে বাধ্য।’ কিন্তু সময় বোধ হয় এসেছে, জাতীয় দলকে জাতীয় দলের জায়গায় আর ক্লাবকে ক্লাবের জায়গায় রেখে দেওয়ার। লাল-সবুজ পতাকা, এর গৌরব এবং সম্মানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। হতে পারে না