Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

68খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের যাবজ্জীবন সাজা নিয়ে তার আইনজীবীদের কোনো বক্তব্য ছিল না রিভিউ শুনানিতে।
যে অভিযোগে এই আল বদর নেতার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, রিভিউ শুনানিতে কেবল সেই অভিযোগ নিয়েই আপত্তি দিয়ে মঙ্গলবার আপিল বিভাগে শুনানি করেন তার আইনজীবীরা।
শুধু একটি বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে কি দণ্ড থেকে পরিত্রাণ পাবেন- জানতে চাইলে আসামির প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “গলাটা তো বাঁচল।”
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তিনি আপিল করলে তার রায়ে সর্বোচ্চ আদালত শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। অন্য একটিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, একটিতে খালাস দেওয়া হয়।
আপিলের ওই রায় পুনর্বিবেচনায় মুজাহিদের আবেদনের শুনানি হয় মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চে। বুধবার রায় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
রায়ের বিষয়ে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যখন মামলা করতে যাই, তখন সব সময়েই প্রত্যাশা করি, আসামি খালাস পাবে।
“এখানে কিন্তু আমরা সমস্ত চার্জের বিরুদ্ধে যাইনি। তার বিরুদ্ধে অন্যান্য চার্জে তার যাবজ্জীবন হয়েছে, ৫ বছর সাজা রয়েছে। তার বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই।”
“আমাদের বক্তব্য একটিমাত্র চার্জে। যে চার্জে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ওই টার ব্যাপারে বলেছি, সে চার্জের পক্ষে যে ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ এসেছে, তার উপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বে আইনি হয়েছে।”
এই রিভিউই আসামির আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপ। মুজাহিদের প্রধান আইনজীবীর কথায় স্পষ্ট, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা অন্য সাজা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
বিষয়টি নিয়ে পক্ষ থেকে কথা বলা হলে খন্দকার মাহবুব তখনও স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা একটা চার্জের (মৃত্যুদণ্ড) বিরুদ্ধে রিভিউ করেছি।
“রিভিউতে খুব লিমিটেড স্কোপ। সেই জন্য আমরা বলছি, চার্জ-৬ এ যে দণ্ডটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ‘নট ইন অ্যাকোর্ডেন্স উইথ ল’। এখানে যে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে এই ধারায় তার সাজা হতে পারে না।”
বাকি যেসব অভিযোগে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড রয়েছে- সেগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, “বাকিগুলো আমরা চ্যালেঞ্জ করছি না। আমরা বলছি, এইটা যেটা আছে, এটাতে যে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, তাতে এটায় ওই ধারায় সাজা দেওয়া যায় না।
“আর অন্যগুলোর ব্যাপারে যখন অলরেডি অ্যাপিলেট ডিভিশন ডিসিশন নিয়েছে, ইন অ্যাকোর্ডেন্স উইথ ল। সেখানে আইনের বাইরে সাজা দিয়েছে, এটা তো আমরা বলতে পারি না।”
শুনানির পর খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে এর আগে ৪২টি মামলা হয়েছে, সেখানে মুজাহিদের নাম ছিল না। আল বদরের কোনো তালিকায় তার নাম পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত কর্মকর্তাও বলেছিলেন।
খন্দকার মাহবুব (ফাইল ছবি) খন্দকার মাহবুব (ফাইল ছবি)
“আমরা দেখিয়েছি, আল বদরের কমান্ড ছিল আর্মি কমান্ড। সেটা আমরা মুনতাসির মামুনের একটা বই থেকে নিয়াজী সাহেবের ইন্টারভিউ থেকে দেখিয়েছি। নিয়াজী সাহেব বলেছেন, আল বদর, আল শামস সরাসরি আর্মি কমান্ডে ছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, অন্য কেস যখন আমরা করেছি, তখন মামলায় যারা আসামি ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, অমুক স্থানে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আগুন দিয়েছে, নির্যাতন করেছে। কিন্তু মুজাহিদ সাহেবের বিরুদ্ধে চার্জে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।
“উনি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হননি। তার বিরুদ্ধে একটা ৃঅভিযোগ এসেছে, বাংলাদেশে যে ইনটেলেকচুয়াল কিলিং হয়েছে, যেহেতু তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি ছিলেন, সে কারণে এর দায় দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতে হবে। সুপিরিয়র কমান্ড যেটাকে বলা হয়।”
“তার বিরুদ্ধে আমরা বলেছি, আমরা একটি ইন্টারভিউ দিয়েছি, সেখানে বলা হয়েছে, এই আল বদররা সরাসরি সেনাবাহিনীর আওতায় ছিল, নিয়াজীর আওতায় ছিলে।”
“এই ক্ষেত্রে যে অপরাধ হয়েছে, সেখানে যদি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে, তাহলে এই দায় দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপানো যাবে না। এই কারণে তাকে এই ধারায় সাজাও দেওয়া যায় না,” বলেন তিনি।
মুজাহিদের জন্য দুই দফায় প্রায় দুই ঘণ্টার শুনানির পর এই আইনজীবী বলেন, “আদালত ধৈর্য সহকারে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেছেন। কাল রায় দিবেন।