খোলা বাজার২৪ ॥মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৫: রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম আড়ানী। এই ছোট গ্রামের বাসিন্দা আসমা খাতুন। বাবা ৭০ এর দশকে বাদাম বিক্রি করতেন। এখন আড়ানি বাজারে তার ছোট একটি পানের দোকান রয়েছে। বাবার টানাটানির সংসারে শত অভাবের মাঝেও নিজেকে মেলে ধরেছেন আসমা খাতুন। অভাবের মাঝেও ছোট আড়ানি গ্রামকে আলোকিত করেছেন আসমা।
৩৪তম বিসিএসের মাধ্যমে হয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। চার ভাইবোনের মধ্যে আসমা খাতুন সবার বড়। তাই সংসারের হাল ধরতে হলে তাকেই এগিয়ে আসতে হবে। এমন ভাবনা থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে চলা আসমার। ছোটবেলায় বাবার কাছেই বর্ণমালার হাতেখড়ি হয়েছে তার।
প্রাথমিক আর অষ্টমে বৃত্তির পর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গণ্ডি পেরিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন।
তিনি এখন বিসিএস ক্যাডার।
কিন্তু শিক্ষজীবনের এ পথচলা তার সহজ ছিলনা। আসমা খাতুন বলেন, অভাবের তাড়নায় একসময় আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আমি যখন রাবিতে প্রথম বর্ষে পড়ি তখন প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট ভালো ছিল তাই চাকরিটা করেনি। এসময় বাবা কিছুটা রাগ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন।
আসমা খাতুন বলেন, অনেকেই আমাকে ভয় দেখাত সাইন্স নিয়ে কি করবা। সাইন্সে তো অনেক খরচ। তোমার পরিবারের পক্ষে এ খরচ বহন করা সম্ভব না। এসময় বাবাই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। বলেছেন মা আল্লাহর উপর ভরসা করে শুরু করে দাও। বড় আশা নিয়ে শুরু করলে ছোট কিছু হলেও পাওয়া যায়। আমার ফ্যামিলিতে বুদ্ধি দেয়ার মত কেউ ছিল না। বাবাই সবসময় সাহস জুগিয়েছেন। আমার দীর্ঘ সাফল্যের পেছনে বাবাই সবকিছু। আসমা বলেন আমার বাবা পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ বাবা। আমি চাই আমার পরিবারের সবাই যেন তাদের মেধার স্ফূরণ ঘটাতে পারে।
বাবা শুকুর আলী বলেন, আট শতকের মত জমি আছে এটাই আমার সম্পদ। আর আমার ছেলে-মেয়েরাই আমার স্বপ্ন। শত অভাবের মাঝেও অনেক কষ্ট শিকার করে আসমা তার সাফল্য দেখিয়েছে। আমি গর্বিত।