Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫: মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে দাবি করে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে গঠিত একটি নাগরিক কমিটি।
‘গণতদন্ত কমিটি’ নামের এই কমিটি মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির শিক্ষক লাউঞ্জে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সকল তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষ্য ও পরিস্থিতির নানা দিক বিবেচনায় মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ২০১৫-১৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। নতুনভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করছি।”
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ওই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ১৯ অক্টোবর টিএসসিতেই বিভিন্ন পেশার ১৭ জনকে নিয়ে এই কমিটি হয়।
তবে কমিটি ঘোষণার পরপর দুজন দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে তাদের বাদ দিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় আনু মুহাম্মদসহ কমিটির ১৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অন্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুতফা, অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, প্রকৌশলী ফিদা হক, গায়ক মাহমুদুজ্জামান বাবু ও লেখক-সম্পাদক রাখাল রাহা।
কমিটির অপর দুই সদস্য ডা. শাকিল আক্তার ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন না।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন সাংবাদিকদের সামনে পাঠ করেন।
পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু গত কয়েকবছরে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রায় নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন আলামতও পাওয়া গেছে, এর সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক জাল ও ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর যোগাযোগের বিষয়েও বিভিন্ন খবর পাওয়া গেছে।
“যেহেতু, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রাপ্ত বা ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার হলে দেওয়া প্রশ্নপত্রের প্রায় সর্বাংশে মিল পাওয়া যাচ্ছে।
“পরীক্ষার আগে বিভিন্ন অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাবার প্রস্তাব পেয়েছে, যারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন নিয়েছে তাদের ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলন চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁসেরই অভিযোগে র‌্যাব কর্তৃক অভিযুক্ত ও ধৃত ইউজিসি কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে এবং তার থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্য বা বক্তব্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি; এছাড়া যাদের ধরা হয়েছে তাদের কোনো বক্তব্য বা তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।
“যেহেতু একই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলেও অনেকরকম অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। যেমন কেউ কম নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে, আবার বেশি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও কাউকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। একই নম্বর পেয়ে কেউ মেধা তালিকায়, কেউ অপেক্ষমাণ তালিকায়।
“যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নিয়ে কোনো তদন্ত না করে তড়িঘড়ি ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছে।
“সেহেতু এই ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম ও বাণিজ্যিক তৎপরতা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ভর্তি নিশ্চিত করবার জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন পথ অবলম্বন করা হয়েছে।”
নতুন করে পরীক্ষা নেওয়াসহ মোট ১১টি সুপারিশ করেছে তারা। এগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য তিনটি এবং ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য করতে দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য আটটি সুপারিশ রয়েছে।
প্রথম তিন সুপারিশ হলো, ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণ, সরকার থেকে একটি স্বাধীন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করে অনিয়মে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি প্রদান এবং সরকার উদ্যোগী না হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে সেই অনুযায়ী সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
দীর্ঘমেয়াদে উত্তরণের জন্য আট সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে চিকিৎসক- শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি ‘মেডিকেল শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রকাশ ও প্রচার নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধি/প্রবিধান প্রণয়ন, পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০ ও অপরাধী ধরতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার একটি সমন্বিত পদ্ধতি অনুসরণ করা।
এছাড়াও কোনো শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, কোচিংবাণিজ্য নিষিদ্ধ করা, পরীক্ষায় অনিয়ম বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তদন্ত করে তা প্রকাশ করা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন একটি ‘শিক্ষা অধিকার কমিশন’ গঠন।