খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫: মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আইনি সব বিষয় নিষ্পত্তির পর এখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, তা জানতে চাইবে কারা কর্তৃপক্ষ।
তা জানার পর দণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনায় দুই যুদ্ধাপরাধীর আবেদন খারিজ হওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “জেল কোডের ৯৯১ রুলে বলা আছে, তারা মার্সি পিটিশন করবেন কি-না, জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। করলে যতটুকু সময় ততটুকু দিতে হবে। জেল কোডে বলা আছে সাত দিন। আর রায়ে বলা আছে, জেল কোড প্রযোজ্য হবে না।
“আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে, সাতদিন অপেক্ষার কোনো প্রয়োজন নাই। সেক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতার যে কথা বলছেন, তাদেরকে খুব শিগগিরই জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা মার্সি পিটিশন করবেন কি না। তাদের জবাবের উপর দিনক্ষণ জেল কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন।”
রিভিউ খারিজের পর দুই যুদ্ধাপরাধীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, দণ্ড কার্যকর সম্পূর্ণ সরকারের উপর নির্ভর করে।
মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলে তার ভাই ফরিদপুরের জামায়াত নেতা আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ জানিয়েছেন। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, বাবার সঙ্গে দেখা করতে বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তারা।
মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ আবরারও বলেছেন, “আমরা নিজেরা এবং আমাদের আইনজীবীরা বাবার সঙ্গে রেগুলার সাক্ষাৎ করতে চাই। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বাবার মতামত কী, সেটা জানতে চাই।”
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনি প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করবেন।
“গতবার যখন কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কপি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এই ক্ষেত্রেও সেই পথ অবলম্বন করা হবে কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা করব। সেই সময়টুকুর জন্য অপেক্ষা করব।”
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকরে যে ব্যবস্থা উপযুক্ত মনে করা হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
“ফৌজদারি কার্যবিধিতে বলা আছে, এই আইনের অধীনে যখন কোনো বিচার হয় এবং সর্বোচ্চ দণ্ড হয়, তখন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হয়। এখানে কিন্তু সেই রকম কিছু বলা নাই। আমরা যেভাবে ইচ্ছা।”
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে আসছেন, তাদের জবাব দিতে আপিল-রিভিউ আবেদনের সুযোগ রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।
“এই বিচার এমন একটা স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, যেটা এর আগে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ব্যাপারে কখনোই গ্রহণ করা হয়নি। যারা অপরাধী, তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আজকে আমরা একটা রায়ের পর্যায়ে পৌঁছেছি।”
“সব দিক দিয়েই আইনের সব কিছু রক্ষা করে এসেছি এবং অধিকার দিয়ে এসেছি। বিশ্বে এই রকম স্বচ্ছতা কখনোই যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে হয়নি।”
“বাকি যে আইনি আনুষ্ঠানিকতাগুলো রয়েছে, সেইগুলো যেন সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়, আমাদের এই রায়ের কার্যকারিতা যেন কোনোদিন কোথাও প্রশ্নবিদ্ধ না থাকে,” বলেন আনিসুল হক।