খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৫: স্বামীর নৃশংসতায় চোখ হারানো গৃহবধূ শিউলি বলছিলেন,‘ একটা চোখেও যদি দেখতে পাইতাম। বুঝলাম দেশে কোনো চিকিৎসা নাই, বিদেশেও কি কোনো চিকিৎসা নাই? সরকারও কি আমার জন্য কিছু করতে পারে না?’
আজ বুধবার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন শিউলি।
৫ নভেম্বর বিকেলে টঙ্গীর জামাইবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় স্বামী জুয়েল চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে তাঁর স্ত্রীকে ভেতরে রেখেই বাসা তালাবদ্ধ করে চলে যান। চিৎকার শুনে পরে প্রতিবেশীরা পুলিশের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে শিউলিকে উদ্ধার করেন। প্রথমে তাঁকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। পথে দীর্ঘ যানজটের কারণে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। পরে রাত পৌনে একটার দিকে তাঁকে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আনা হয়।
শিউলির চোখের ভেতরে এখন কিছু নেই। দুই চোখের ওপরে সেলাইয়ের জায়গাগুলো কুচকে আছে। তিনি বলেন,‘আমি তো চোখের পাতা খুলতে পারি না। কেউ যদি একটু সহযোগিতা করত। আমার তো দুই চোখই নাই, আমার আর কী করার আছে।’
শিউলি জানান, পাঁচ বছর আগে শিউলি জুয়েলকে বিয়ে করেন। জুয়েলের প্রথম বিয়ে হলেও এটি শিউলির দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই দেখছেন স্বামী নেশা করে। আগের স্বামীর কাছ থেকে যে সম্পত্তি পাবেন, তা এনে দেওয়ার জন্য প্রায়ই তাঁকে মারধর করতেন জুয়েল। আর নেশার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তাঁর চরিত্র নিয়ে প্রায়ই সন্দেহ করতেন জুয়েল।
শিউলি এখন আর একা একা কিছু করতে পারেন না। তাঁর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আঁখি (প্রথম স্বামীর সন্তান) শৌচাগারে যাওয়াসহ সব কাজে সহায়তা করেন। ঘটনার পর শিউলি বাদী হয়ে টঙ্গী থানায় মামলা করেছেন। তবে মামলার অগ্রগতি কতটুকু তা জানেন না তিনি। মামলা কে চালাবে তা নিয়েও তিনি চিন্তিত।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক শওকত আরা শাকুর শিউলির অস্ত্রোপচার করেন। তিনি বলেন,‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু শিউলির চোখের ভেতরে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তাই তিনি আর কোনো দিনও দেখতে পাবেন না। আমরা এখন শুধু কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে দিতে পারব।