খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৫ : শিশুটির ‘অপরাধ’ বলতে একটাই, তার মা-বাবা এইচআইভি পজিটিভ। অন্য অভিভাবকদের চাপে পড়ে নার্সারির শিশুর স্কুলে আসা বন্ধ করে দিল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি ভারতের দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থানার নেপালগঞ্জ এলাকার। মা-বাবা দু’জনেই এইচআইভি-তে আক্রান্ত, সে কথা জেনেও তাকে ভর্তি নিয়েছিল স্থানীয় একটি বেসরকারি নার্সারি স্কুল। অভিযোগ, পরে এলাকার বাসিন্দা ও অন্য অবিভাবকদের চাপে পড়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে স্কুলে পড়াশোনা বন্ধের নিদান দিয়েছে।
এ বছর জুন মাস থেকে অসহায় শিশুটি একপ্রকার ঘরবন্দি। এলাকায় একঘরে হয়ে রয়েছে পুরো পরিবারও। বিষয়টি স্থানীয় বিডিও থেকে শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সমস্ত স্তরে জানানো হয়। কিন্ত্ত তাতে কোনও সুরাহা মেলেনি। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের সাফাই, ‘আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে কিছু বলিনি। এলাকার বাসিন্দা ও অন্য অবিভাবকদের চাপে পড়ে বাচ্চটিই স্কুলে আসছে না। ’
শিশুটির বাবা পেশায় দিনমজুর, মা স্বাস্থ্যকর্মী। চলতি বছরে শুরুতেই স্থানীয় দীপশিখা নার্সারি স্কুলের কেজি ওয়ানে ভর্তি করানো হয় শিশুটিকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই শিশুটির মা-বাবা রোগের কথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিশদে জানান। কিন্ত্ত তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনও আপত্তি করেনি। কিন্ত্ত স্কুলে ভর্তির কয়েক মাস পর থেকে শিশুটির মা-বাবার এইচআইভি-তে আক্রান্তের কথা জানাজানি হয়। এলাকার বাসিন্দা ও স্কুলের অন্য অবিভাবকদের মধ্যে। বিষয়টি চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। কিন্ত্ত এ নিয়ে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন শিশুটির মা। কিন্ত্ত তাতে কোনও লাভই হয়নি। একদিন বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে শিশুটির বাবা দেখেন অন্য অবিভাবকরা স্কুল ঘেরাও করেছেন। স্কুলে ঢুকে তিনি জানতে পারেন, তাঁরই মেয়ের স্কুলে আসা নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। অভিযোগ, সেদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অবিভাবকদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয় শিশুটি ও তার বাবাকে। তারপরই স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে স্কুলে পড়াশুনো বন্ধের নিদান দেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত নস্কর ফোনে জানান, ‘অবিভাবকদের চাপে পড়ে বাচ্চাটি নিজেই স্কুলে আসছে না। আমরা বাচ্চাটিকে স্কুলে আসতে নিষেধ করিনি। ‘শিশুটির মা জানান, ‘এরপরই স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আর আমাদের বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো যাবে না। ওকে বাড়িতে রেখেই পড়াশোনা করাতে হবে। যদি আমাদের বাচ্চা স্কুলে যায়, তা হলে অন্য বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবে না বলে তাদের অভিভাবকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাই আর আমাদের বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে পারিনি। পাশের আরও কয়েকটি স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্ত্ত বিষয়টি চাউর হওয়ার কারণে কোনও স্কুলই আর আমার বাচ্চাকে ভর্তি নিচ্ছে না। প্রশাসনের সব স্তরে জানিয়েছি। কিন্ত্ত আজও কোনও সুরাহা হয়নি। ’
শিশুটির বাবা বলেন, ‘একাধিক বার স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাই আমার বাচ্চা তো সম্পূর্ণ সুস্থ , স্কুলে পাশাপাশি বসে পড়াশুনা করলেও তো আর এইচআইভি হয় না। কোন কথাই শোনেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।