Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

90খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৫ : বিচারকদের সইয়ের পর যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় পাওয়ার পর তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ।
আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন বলেন, “দুটি রায় নেমেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
এরপর সাড়ে ৭টার দিকে আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী ও কয়েকজন কর্মকর্তা রায়ের অনুলিপি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছান।
এর এক ঘণ্টা পর রায়ের অনুলিপি নিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডে কারাগারের দিকে রওনা হন ট্রাইব্যুনালের কর্মীরা।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বলেন, “কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রায় যাচ্ছে।”
রাত ৯টার দিকে রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করেন ট্রাইব্যুনালকর্মীরা।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অনুলিপি হাতে পাওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে প্রাণভিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারবে।
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও আপিল বেঞ্চের অপর তিন বিচারক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুজাহিদের ২৯ ও সাকা চৌধুরীর ১৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে সই করেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
দুই রায়েই বলা হয়, আপিল শুনানির পর দেওয়া রায়ে কোনো ত্রুটি অথবা আইনের বত্যয় বিচারকদের নজরে আসেনি। সুতরাং দণ্ড পুনর্বিবেচনার কোনো কারণও তারা খুঁজে পাননি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি আপিল করলে চলতি বছরের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় এ বছর ২৯ জুলাই আপিলের রায়েও বহাল থাকে।
তাদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই দিনে, ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং কারা কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর তা দুই ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনায়।
এরপর দুই যুদ্ধাপরাধী ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন আপিল বিভাগে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বুধবার আদালত তা খারিজ করে দেয়।
দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর শেষ আইনি সুযোগ ছিল রিভিউ আবেদন। তা খারিজের মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়।
এখন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে শেষ সুযোগে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। আসামি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবে।
রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে সাকা চৌধুরী ও পরে মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা করেন।
অবশ্য এর আগে দণ্ড কার্যকর হওয়া দুই যুদ্ধাপরাধীর ক্ষেত্রে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি ফয়সালা হওয়ার পর তাদের ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে আরও একবার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাত করতে দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর সাকা চৌধুরীর ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকরা প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চান।
জবাবে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তিনি বলেন, “কী, মার্সি পিটিশন?”
একই প্রশ্নে মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, “তিনি (বাবা) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাদের রাষ্ট্রের ও জনগণের অভিভাবক। তিনি একজন আইনজীবীও।’ সুতরাং তার কাছে আবেদন করব কি-না আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।”
এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন এক দিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে।
আর চলতি বছর ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য যুদ্ধাপরাধ আইনে দণ্ডিতরা অন্য মামলার আসামিদের মতো প্রাণভিক্ষার জন্য কারা বিধিতে নির্ধারিত সাত দিন সময় পান না। সিদ্ধান্ত জানাতে তারা কতদিন সময় পাবেন সে বিষয়েও আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য আসামি ‘যৌক্তিক সময়’ পাবেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, একটি দরখাস্ত লিখতে যে সময় লাগে- ‘যৌক্তিক সময়’ তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিৎ নয়।