Mon. May 5th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

61খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২০ নভেম্বর ২০১৫ : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড যেকোন সময়ে কার্যকর করা হবে। এই দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
সাকা-মুজাহিদের মেডিকেল চেকআপ সম্পন্ন:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মেডিকেল চেকআপ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল চেকআপে অংশ নেওয়া চিকিৎসক ডা: বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস।
ডা: বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমিসহ আর একজন চিকিৎসক বৃহষ্পতিবার রাতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মেডিকেল চেকআপ করেছি। তারা দু’জনেই সুস্থ আছেন। মানসিকভাবেও শক্ত আছেন তারা।
ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত:
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শীর্ষ এই দুই রাজনীতিকের মেডিকেল চেকআপ শেষে ফাঁসির মঞ্চ ও দুজন জল্লাদকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর ফাঁসির মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাত দুইটার মধ্যে সেটি শেষ হয়।
তিনি বলেন, মঞ্চটি ধোয়ামোছা শেষে এর চারপাশে শামিয়ানা টানানো হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর করতে শাহজাহান ও রাজু নামের দুজন জল্লাদকেও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সচিবালয়ে প্রাক ফাঁসির বৈঠক সম্পন্ন:
যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশের আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
আজ শুক্রবার দুপুরে সাচবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এদিকে আজ শুক্রবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, এর প্রক্রিয়া শেষ করে আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘প্রতিটা স্টেপ আমরা আইন অনুযায়ী নিয়েছি, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে আমরা কিছুই করছি না। কাজেই তাঁকে রায় শোনানো এবং পরবর্তী বিষয়গুলো, যা বিচারক রায় দিয়েছেন এবং যে প্রক্রিয়া চলছে, সেভাবেই হবে।’
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি সাকা-মুজাহিদ?
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলেই সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে কারাগারের একজন কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। তাঁরা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, সময় নিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আজ শুক্রবার আবারও তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
মোটকথা আজ বিকেলে যদি সাকা ও মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চান এবং প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও রাষ্ট্রপতি যদি ক্ষমা না করেন। তাহলেই সাঁকা মুজাহিদের ফাঁসি আজ রাত ১২টার পর যেকোন সময় কার্যকর করা হবে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি তাদের দুজনকে পড়ে শোনানো হয়। সে সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর, জেলার নেসার আলমসহ চার ডেপুটি জেলার শিরিন আকতার, মোহাম্মদ লাভলু, মাজহারুল ইসলাম ও সর্বোত্তম দেওয়ান।
রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে তারা রায় পড়ে শোনানোর জন্য কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমে সাকা ও পরে মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হয়। রায় পড়ে শোনানো শেষে রাত ১১টা ১০ মিনিটে তারা কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪২ মিনিটে কারাগারে পৌঁছায়। রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও সিনিয়র সহকারী জজ আফতাবুজ্জামান ও সিনিয়র আইন গবেষণা কর্মকর্তা ফাহিম ফয়সালসহ ট্রাইব্যুনালের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রায় দুটি প্রকাশ করা হয়। রায় দুটিতে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তাদের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রয়েছে। এখন রায় কার্যকরে আর আইনি বাধা নেই।
সাকা চৌধুরীর বিচার :
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২৬ জুলাই। এর আগে অবশ্য নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা হয় ২৬ জুন। ওই মামলায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন তিনি। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে। ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ২৩ অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে সাকা চৌধুরীর বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিল বিভাগে শুনানি শুরু হয় ১৬ জুন। ২৯ জুলাই দেওয়া রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর সাকা রিভিউ আবেদন করেন। সে আবেদনও খারিজ হয় বুধবার।
মুজাহিদের বিচার:
২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারের পর একই বছর ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে। ২০১২ সালে মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। তার বিচার শুরু হয় ২০১২ সালের ২১ জুন। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। আপিলের শুনানি শুরু হয় গত ২৯ এপ্রিল। ১৬ জুন দেওয়া রায়ে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর মুজাহিদ রিভিউ আবেদন করেন। সে আবেদনও খারিজ হয় বুধবার।