খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫ : সহজে ঋণ পরিশোধে তা পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল’ কোনো সুবিধা দিয়েই ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের শুরুর তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের। তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশই এখন খেলাপি।
সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের শেষে (জুন, ২০১৫) ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ব্যাংক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুবিধা নেওয়া অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এককালীন কিছু টাকা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করে পরে আরও ঋণ নিয়েছে, যা এরই মধ্যে ‘খেলাপি ঋণে’ পরিণত হয়েছে।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি নীতিমালা জারি করে। যেখানে ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি পরিমাণ খেলাপি ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সহজে ঋণ পরিশোধে তা পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়।
এরপর দেশের ১৬টি ব্যবসায়ী গ্রুপ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করে, যার অর্ধেকই ছিল খেলাপি ঋণ। এছাড়া এককালীন জমা দিয়ে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনঃতফসিল করা অনেক ঋণ এখন আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
এই প্রবণতাকে সার্বিক অর্থনীতির জন্য শুভলক্ষণ মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ আহমেদ বলেছেন, খেলাপ করা ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমানো যাচ্ছে না।
তবে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদউদ্দিন এর পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘নির্ধারিত সময়’ এবং ‘অবকাঠামো সুবিধার অভাব’কে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, “দুটো কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। প্রধানটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি নির্ধারণের সময়। দ্বিতীয়টি ব্যবসা পরিস্থিতি।”
২০১৪ সালের এক নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের বকেয়া ঋণকে প্রাথমিকভাবে খেলাপি বিবেচনার ঘোষণা দেয়, আগে এ সময় ছিল ছয় মাস।
এম ফরিদউদ্দিন বলেন, “অনেক গ্রাহক ঋণ নিয়ে গ্যাস বা বিদ্যুতের অভাবে কারখানা চালু করতে পারছেন না বা চালু করলেও ফুল প্রোডাকশনে যেতে পারছেন না। তাই তারা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বকেয়াটা তখন খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।