Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৫ : জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করতে ফ্রান্সের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার গভীর রাতে এই আহ্বান জানিয়ে উত্থাপন করা দেশটির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। খবর বিবিসি, এএফপি ও দ্য গার্ডিয়ানের।
সম্প্রতি প্যারিসে ভয়াবহ হামলায় ১৩০ জন নিহত হওয়া এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের অব্যাহত তৎপরতার প্রেক্ষাপটে আইএসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি তোলা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মত ভোট দেওয়ায় এখন ফ্রান্সের এ প্রয়াসে এক কাতারে শামিল হলো বিশ্বশক্তিগুলো। তবে এই প্রস্তাব শর্তসাপেক্ষ এবং তা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করবে না।
অনুমোদিত প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ‘সক্ষমতাসম্পন্ন’ সব দেশের উচিত আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া এবং জঙ্গিগোষ্ঠীটির আরও হামলা প্রতিহতের চেষ্টা বৃদ্ধি করা। সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক আইএস আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক বৈশ্বিক ও নজিরবিহীন হুমকি সৃষ্টি করেছে।
মিসরের সিনাই উপত্যকার আকাশে সম্প্রতি রাশিয়ার যাত্রীবাহী একটি বিমানকে ভূপাতিত করে ২২৪ জনকে হত্যার ঘটনা ছাড়াও লেবানন, তুরস্ক ও তিউনিসিয়ায় বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার দাবি করেছে আইএস। ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানীতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার রেশ না কাটতেই হোয়াইট হাউসে হামলার হুমকি দিয়েছে আইএস। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র নিউইয়র্ক নগরসহ পশ্চিমা বড় বড় শহরে হামলার হুমকি দিয়েছিল সংগঠনটি।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, আইএসকে মোকাবিলায় গোষ্ঠীটির নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে সক্ষম সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। আইএসে যোগ দিতে ইরাক ও সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টারত বিদেশিদের স্রোত ঠেকাতে এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগান বন্ধে প্রচেষ্টা বাড়াতেও আহ্বান জানাচ্ছে এ প্রস্তাব।
প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিকে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ আখ্যা দিয়ে পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্যতম যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একতাবদ্ধ হয়েছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে বসে এই অপশক্তিকে পরাজিত করার স্থির সংকল্প করেছে। এ অপশক্তি প্রতিটি দেশ ও প্রতিটি ধর্মের মানুষকে হুমকিতে ফেলেছে।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ নিরাপত্তা পরিষদের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি আইএসকে নির্মূলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংহতি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।
প্রস্তাবের ওপর প্রতিক্রিয়া দিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরীয় দূত বাশার জাফারি সাংবাদিকদের বলেন, অবশেষে যাঁরা জেগে উঠেছেন এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোটবদ্ধ হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।
সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে আইএস। সিরিয়া ও ইরাকের এক উল্লেখযোগ্য অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে তারা। তাদের দমনে এ দুই দেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী। আর গত সেপ্টেম্বরে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, আইএসসহ জঙ্গিরাও তাদের হামলার লক্ষ্য।
ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠা জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে এত দিন পর্যন্ত সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিশ্বশক্তিগুলো। বারবার সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিরাপত্তা পরিষদে মতানৈক্য। কিন্তু পঞ্চশক্তির আরেক দেশ ফ্রান্সে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নড়ে বসেছে বিশ্ব। রাশিয়া ও চীনও এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়ে পশ্চিমা অন্য শক্তিগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আইএসের বিরুদ্ধে দৃশ্যত লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছে।
আইনি ভিত্তি জোগাবে না: আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব রকমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হলেও ঢালাও সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এটি কোনো আইনি ভিত্তি জোগাবে না। এতে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলাসহ বিভিন্ন শর্ত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফ্রান্সের কূটনীতিকেরা বলেন, আইএসবিরোধী প্রচারে প্রস্তাবটি এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন জোগাবে, যা প্যারিসে সাম্প্রতিকতম হামলা এবং গত মাসে মিসরে রুশ যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার পর জোরালো হয়েছে।
একই বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ভোট নিঃসন্দেহে সিরিয়ায় আরও কিছু করা এবং আইএসকে ধ্বংস করার চূড়ান্ত পদক্ষেপের পক্ষে এক সুপরিসরের আন্তর্জাতিক সমর্থন দেবে।