Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

33খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৫ : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদ মৃত্যুদণ্ড মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলেও তা নিয়ে তাদের পরিবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
যুদ্ধাপরাধী এই দুই সাবেক মন্ত্রীর ক্ষমার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করার পর রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
তবে তাদের সঙ্গে শেষ দেখা করে এসে দুজনের ছেলেই দাবি করেছেন, তাদের বাবা ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেননি।
এনিয়ে সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই- উনারা (সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ) যে দরখাস্ত করেছিলেন, তা সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য।”
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদটি পড়েও শোনান তিনি; যেখানে লেখা আছে- “কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “যদি কোনো আবেদনের উপরে লেখা থাকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ প্রসঙ্গে, তাহলে কি সেটা মাফ চাওয়ার দরখাস্ত হয় না? সেটা আপনারা (সাংবাদিক) বিচার করেন।”
এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল মুজাহিদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের। তারা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করা। ক্ষমা না চাইলেও কিন্তু রায় কার্যকর করতে পারতাম।ৃএটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে অবান্তর, একটা ইস্যু সৃষ্টি করা।”
শনিবার দুপুরের পর ক্ষমা চাওয়ার খবর প্রকাশ হলে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর।
এরপর রাতে কারাগারে শেষ দেখা করে বেরিয়ে দুই যুদ্ধাপরাধীর ছেলেই বলেন, তাদের বাবা ক্ষমা চাননি। সালাউদ্দিন কাদেরকে দাফনের সময়ও একই কথা বলেন হুম্মাম।
ক্ষমার আবেদন বন্দিদের করতে হয় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। ওই মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে দেখিয়ে তা যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে।
ক্ষমার আবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “আবেদন তো আমাদের কাছে এসেছে। তাদের জানার কথা নয়।”
যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের তৎপরতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাকা চৌধুরীর ছেলে কোনো জায়গায় ছোটোছুটি করতে তো কম যায় নাই। বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছে। তার পার্টি চিফের বাসায় গিয়েছেৃসব জায়গায় গিয়েছে। শাস্তি মওকুফ করার জন্য কিংবা একটা কৌশল বের করার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা তারা করেছেন।”
মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজের পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়াই ছিল আসামির একমাত্র সুযোগ। তবে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে আর কোনো পিটিশন করা যায় না। শুধু সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগে মাফ চেয়ে আবেদন করা যায়।
“আমাদের কাছে যে পিটিশন দুটি এসেছিলৃমতামত দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলাম, রাষ্ট্রপতি যা খারিজ করে দিয়েছেন। ওটি সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের দরখাস্ত ছিল।”
আনিসুল হক বলেন, “উনারা এসব কথা শুধু বাংলাদেশের জনগণকে না, সারাবিশ্বে তাদের যারা ম“দাতা আছেন তাদের বিভ্রান্ত করতেও এসব কথা বলছেন।”
প্রাণভিক্ষার আবেদন চাওয়া-না চাওয়া নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ভিন্ন বক্তব্য আসায় ওই আবেদন প্রকাশ করা হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়া ওই দরখাস্ত প্রকাশ করা যাবে না।
বিএনপি সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর না করতে কোনো বিদেশি সরকারের চাপ ছিল না বলে জানান আইনমন্ত্রী।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনো কমার্শিয়াল সংগঠন যদি রায় স্থগিতের অনুরোধ করে, আমরা তা মানতে রাজি নই। আমরা স্বাধীন দেশ, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করেছি।”
“যখন কেউ পয়সা দেয় অ্যামেনেস্টি তখন তাদের গান গায়, একপক্ষের কথা বলে,” ফাঁসি স্থগিত চেয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্যের জবাব দেন তিনি।