খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫: যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির পর ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হাই কমিশনার সুজা আলমকে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসতে বলা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও উদ্বেগ জানিয়েছিল পাকিস্তান।
‘পাকিস্তানের প্রতি অনুগত এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করায়’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে সে সময় দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়।
তা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে ওই প্রস্তাব গ্রহণের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।
আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর রোববার প্রথম প্রহরে সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর কয়েকজনের সাজার পর এই দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় ইসলামাবাদের নাখোশ হওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারকে ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে এনিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার কথাও বলেছে পাকিস্তান।
১৯৭১ সালের বাঙালিদের জীবনের মর্মান্তিক অধ্যায়কে পাশে রেখে ১৯৭৪ সালের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ চুক্তির আলোকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ঢাকার প্রতি আহ্বান রেখেছে ইসলামাবাদ।
২৫ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর বাঙালিদের স্বাধিকারের দাবিকে দমন করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
তখন প্রতিরোধ যুদ্ধে নামে বাঙালিরা। নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে।
একাত্তরে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশেরই কিছু দোসর পেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তাতে সমর্থন দেয়; গঠন করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী।
মুসলিম লীগ নেতা পাকিস্তান গণপরিষদের সাবেক স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস হিসেবে কুখ্যাত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দালাল আইনে গ্রেপ্তার হয়ে বন্দি অবস্থায় মারা যান ফজলুল কাদের। তার ছেলে সালাউদ্দিন বাংলাদেশের মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তারই নেতৃত্বে হয়েছিল বলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উঠে এসেছে। তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত এই অঞ্চলে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নামে একটি শাখা কাজ করত। স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে সক্রিয় হয় দলটি।
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত নেতা এবং তাদের রায়ের পর পাকিস্তান জামায়াত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে।