Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

14খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত জানতেন না রাতেই তাঁদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। রাতে তাঁরা স্বাভাবিক খাবারও খেয়েছিলেন। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফাঁসির বিষয়টি জানতে পারেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল রোববার বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা কনডেমড সেলের পাশাপাশি কক্ষে থাকা সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত ধারণা ছিল, তাঁদের ফাঁসি কার্যকর বিলম্বিত হবে। তবে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। শনিবার রাতে তাঁরা স্বাভাবিকভাবে খাবার খেয়েছেন। ছিল ভাত, মাছ ও মাংস।
কারা কর্মকর্তারা বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর কারা কর্তৃপক্ষ দুজনের কাছে পৃথকভাবে জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা বিশেষ কী খেতে চান। জবাবে তাঁরা বিশেষ কিছু খেতে চান না বলে জানান। পরে রাত আটটার দিকে তাঁদের খাবার পাঠানো হয়।
কারা সূত্র বলেছে, ১৫ জুন মুজাহিদকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সাকা চৌধুরীকে দীর্ঘদিন ধরে রাখা হয়েছিল কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগারে। ১৫ নভেম্বর তাঁকেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। দুজনকে কারাগারের রজনীগন্ধা কনডেমড সেলের পাশাপাশি কক্ষে রাখা হয়। কনডেম সেলের কাছেই রয়েছে স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ। ১৮ নভেম্বর মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর করা পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়। ফাঁসির মঞ্চ ঘিরে শামিয়ানা টানানোর জন্য বাইরে থেকে বাঁশ আনা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যার পর মঞ্চ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়। রাতে মঞ্চে আলো জ্বালানো হয়।
কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার পর দুই মানবতাবিরোধী অপরাধীর প্রাণভিক্ষার আবেদনও শনিবার রাতে নাকচ হওয়ার খবর জানায় সরকার। এরপর কারাগারের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ রাতেই তাঁদের ফাঁসি হওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। পরিবার চলে যাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার বিষয়টি জানায়। এ সময় তাঁরা দুজনে নীরব হয়ে যান।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ ‘ঝামেলা’ করতে পারেন, এমন আশঙ্কা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। সে কারণে কারাগারের ভেতরে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে কনডেমড সেল থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে বের করে আনা হয়। কারাগার মসজিদের পেশ ইমাম মনির হোসেন তাঁদের দুজনকেই তওবা পড়াতে যান। কিন্তু তাঁরা দুজন নিজেরাই তওবা পড়তে চান বলে জানান। তখন পেশ ইমাম বলেন, রীতি অনুযায়ী তাঁদের তওবা পড়তে হবে। পরে তাঁরা তওবা পড়েন। তাঁদের দুজনের পরনে কয়েদির পোশাক ছিল।
কারা সূত্রগুলো বলছে, মো. শাহজাহান, রাজুসহ তিন জল্লাদ সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে জমটুপি পরিয়ে ধরে ফাঁসির মঞ্চে তোলেন। এ সময় দুজনের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে মাথা থেকে বুক পর্যন্ত লম্বা জম টুপি পরানো হয়, এর রং ছিল কালো। মুজাহিদ প্রথমে জমটুপি পরতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অসুবিধা হবে না। জমটুপি পরাতে হবে না।’ কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, রীতি অনুযায়ী তাঁকে জমটুপি পরতেই হবে। পরে তিনি জমটুপি পরেন। মঞ্চে ওঠা পর্যন্ত দুজনে উচ্চ স্বরে কালেমা ও দোয়া-দরুদ পড়েন।
রাত ১২টা ৫০ মিনিটের পর জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবির রুমাল মাটিতে ফেলে দেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসির মঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত জল্লাদ মো. শাহজাহান ম্যানিলা রশি (ফাঁসির দড়ি) টান দিয়ে একই সময়ে সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করেন। কারাবিধি অনুযায়ী, কারা তত্ত্বাবধায়কের রুমাল মাটিতে ফেলে দেওয়া মানেই ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে মৃত ঘোষণ করেন ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন ‘ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্পাইনাল কডটি ভেঙেছে কি না, মূলত সেটিই পরীক্ষা করে দেখা হয়। এর বাইরে তাঁদের শরীরের আর কোথাও কাটা-ছেঁড়া করা হয় না।’ ফাঁসি কার্যকরের পর কাফনের কাপড়ে জড়িয়ে দুটি মরদেহ রাত ২টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যখন ফাঁসি মঞ্চের দিকে আনা হচ্ছিল, তখন তিনি ছিলেন স্বাভাবিক ও নীরব। জল্লাদদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা উচ্চ স্বরে কালেমা ও দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন।
ফাঁসির রায় কার্যকরে সহায়তা করতে জল্লাদ শাহজাহান ও রাজুর সঙ্গে আরও ছিলেন আবুল, মাসুদ ও মুক্তার। তাঁরা সবাই বিভিন্ন মামলায় বছরের পর বছর সাজা খাটছেন। একজন কারা কর্মকর্তা বলেন, জল্লাদ শাহজাহান একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাঁর সাজার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। জল্লাদের দায়িত্ব পালনকারীকে কারাগার থেকে বিশেষ বন্দী হিসেবে সুবিধা দেওয়া হয়।