খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫: গত বছর ঠিক এই সময়ই ক্রিকেট বিশ্ব থমকে গিয়েছিল ফিলিপ হিউজের মৃত্যুতে। বাউন্সার সামলাতে গিয়ে এই তরুণ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের মৃত্যু নাড়া দিয়েছিল সবাইকেই। হিউজের সেই অসময়ের মৃত্যু সবচেয়ে বেশি বোধহয় ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁর সতীর্থ ক্রিকেটারদেরই। বন্ধু মাইকেল ক্লার্ক কেঁদেছিলেন, কেঁদেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার থেকে শুরু করে প্রায় সবাই। যে বাউন্সারকে ক্রিকেট মাঠে আগ্রাসনের অনুষঙ্গ ভাবত অস্ট্রেলীয়রা, সেই বাউন্সারের প্রতিও তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা কেমন যেন বদলে যেতে থাকল। হিউজের মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষের দিকে আগুন ঝরানো বাউন্সার ছুড়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা এখন আর বন্য উল্লাসে মেতে ওঠে না। বরং ভয়ংকর বাউন্সার ছুড়ে ফেলার পর তাদের তরফ থেকে দেখা যায় ব্যাটসম্যানদের প্রতি সহানুভূতিই।
মিচেল জনসনকেও বদলে দিয়েছিল হিউজের অকাল মৃত্যু। ফাস্ট বোলার হিসেবে একটা সময় যেখানে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের দিকে বাউন্সার দিয়ে তৃপ্ত হতেন জনসন, হিউজের মৃত্যুর পর সেই তৃপ্তিটাই পরিণত হল আতঙ্কে। বন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি আর বাউন্সার দিয়ে আনন্দ পেতেন না, উল্টো মনে হতো, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের জায়গায় হিউজকে বসিয়ে এক ধরনের দুঃখবোধ পেয়ে বসত তাঁকে। এই ব্যাপারটিই নাকি এক বছরের মাথায় ঠেলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে। হিউজের মৃত্যুর পর একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ক্রিকেট খেলাটা তাঁর কাছে অর্থহীনই মনে হয়েছে।
ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন জনসন নিজেই, ‘ফিলের মৃত্যু আমাকে দুঃখ ও বেদনাবোধে ভারাক্রান্ত করে। তাঁর মৃত্যু গোটা বিশ্বেই ক্রিকেটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ওর মৃত্যু কিন্তু ক্রিকেট খেলার ধরনে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এনেছে।’
প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর পর থমকে গিয়েছিলেন জনসন। ক্রিকেট বলের দিকে তাকালেই এক ধরনের আতঙ্কবোধ কাজ করত তাঁর মনে। মনে হতো, এমনই একটি বলের আঘাতেই তো ফিল ওপারে চলে গেছে। প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ফাস্ট বোলার হয়েও বোলিংয়ের ধরনে পরিবর্তন এনেছিলেন। বলে গতিও কমিয়ে দিয়েছিলেন। মাঝে-মধ্যে অভ্যাসবশত দুই-একটা শর্ট পিচ বল হয়ে গেলেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের জন্য মায়া অনুভব করতেন। ভাবতেন, সে হয়তো আমার প্রতিপক্ষ। কিন্তু ওর তো একটা পরিবার আছে। পরিবারের সবাই হয়তো সারাক্ষণ তাকিয়ে আছে ওর দিকে, ‘আমি ব্যাটসম্যানদের শরীরে যে দুই-একবার বল লাগিয়েছি। তাতে আমার ওদের প্রতি মায়া লেগেছে। ওদের পরিবারের কথা মনে হয়েছে। চিন্তা করেছি, শরীরে বল লাগিয়ে আমি মোটেও ঠিক কাজ করছি না। এটা কখনোই ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপূরক নয়।’ সূত্র: এবিসি নিউজ।