Sun. May 11th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৫: আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ‘পাকিস্তানের সাচ্চা বন্ধু’ অভিহিত করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের শাস্তি হিসেবে তার ফাঁসিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান।
একাত্তরে পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্থাপনকারী ব্যক্তিদের বিচার ঠেকাতে ইসলামাবাদকে পদক্ষেপ নিতেও উসকানি দিয়েছেন দলটির আমির সিরাজুল হক।
একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকার মুজাহিদকে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এক জনসভায় বক্তব্যে সিরাজুল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বলে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ডনের খবরে বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের জামায়াত প্রধান বলেন, “আজকের দিনটি একটি কালো দিন, কারণ এই দিনে ঢাকায় পাকিস্তানের এক সাচ্চা বন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছে, ‘ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায়’ আলবদর বাহিনী গঠন করে জামায়াতসহ ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুজাহিদ।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগেও সিরাজুল হক বাংলাদেশে ‘ভারতের ম“পুষ্ট’ সরকারের হাত থেকে মুজাহিদকে বাঁচাতে পাকিস্তানে দোয়া দিবসের কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল পাকিস্তান জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের গুরু গোলাম আযমের আমৃত্যু কারাদণ্ডেও তাদের একই প্রতিক্রিয়া আসে।
পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের কারণে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের ‘নামে’ তাদের শাস্তি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সিরাজ।
তিনি বলেন, “যারা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়ার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ হত্যা করছে।”
একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের শাখা ছিল গোলাম আযম নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নামার পাশাপাশি তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠন করেছিল আল বদর বাহিনী, যার নেতা ছিলেন মুজাহিদ।
স্বাধীনতার পর ধর্মনিরপেক্ষ নতুন দেশে জামায়াতসহ ইসলামী নিষিদ্ধ হলেও পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে রাজনীতিতে পুর্নবাসিত হয়। মুজাহিদ পরে বাংলাদেশের মন্ত্রীও হন।
তবে একাত্তরের ভূমিকার জন্য কখনও দলটি ক্ষমা চায়নি, বরং দলটির নেতারা দম্ভের সঙ্গে বলেছিলেন, একাত্তরে তাদের অবস্থান ‘সঠিক’ ছিল। মুজাহিদ বলতেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তান থেকে বিরোধিতা এবং দণ্ডিতদের পক্ষে পাকিস্তানে বিবৃতি, গায়েবানা জানাজার দিকে ইঙ্গিত করে একাত্তরের গণহত্যার বিচার দাবির আন্দোলনকারীরা বলছেন, পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়ায় দণ্ডিতদের ভূমিকা উন্মোচন করে দিচ্ছে।
একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘সমর্থন দেওয়া’ ব্যক্তিদের একের পর এক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও ‘নীরব থাকায়’ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল রাফায়েল শরিফের সমালোচনা করেন জামায়াত নেতা সিরাজ।
ডনের খবরে বলা হয়, জনগণ ‘উদার পাকিস্তান’ চেয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দেওয়া সাম্প্রতিক এক বিবৃতির সমালোচনা করে তাকে ভারত বা বাংলাদেশ চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন সিরাজ।
এই জনসভায়ই তিনি আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সিরাজ এই জনসভায়ই তিনি আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সিরাজ
“যদি উদারতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা নওয়াজ শরিফের এতই পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে তিনি ভারত বা বাংলাদেশে চলে যেতে পারেন। পাকিস্তানিরা জান দেবে, তবুও উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ পাকিস্তান মেনে নেবে না।”
মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ পাকিস্তানের সরকারি পর্যায় থেকেও এসেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দেওয়ার পর সোমবার ঢাকায় তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এর আগে কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান পার্লামেন্টে একটি নিন্দা প্রস্তাবও গৃহীত হয়, যাতে জামায়াতের চাপ ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে আসে।