Thu. May 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৫: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ ১১ জনের মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে চারটি মামলার বিচার, যেখানে আসামি ১৮ জন। এই নিয়ে ১৫ মামলায় ২৯ জনের বিচার চলছে।
এর বাইরে ট্রাইব্যুনালে প্রাক-বিচার পর্যায়ে আছে আরও ১০টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২৩টি অভিযোগের তদন্ত করছে, যেখানে আসামির সংখ্যা ৬৪ জন।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬০৯টি অভিযোগ এখনো তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তদন্ত সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার গত ৩০ অক্টোবর তৈরি করা সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আপিল বিভাগে বিচারাধীন ১১ মামলার আসামিরা হলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী, জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সার, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, পিরোজপুরের আবদুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের সিরাজ মাস্টার ও খান মো. আকরাম হোসেন।
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত পৌনে ছয় বছরে ট্রাইব্যুনাল ২১টি মামলার রায় দিয়েছেন। ওই মামলাগুলোর বেশির ভাগ আসামি জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে এখন যেসব মামলার বিচার ও তদন্ত চলছে, সেগুলোর বেশির ভাগ আসামি স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তি।
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা করা ২১টি মামলার মধ্যে পাঁচটি ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে চারজনের। এঁরা হলেন বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
ট্রাইব্যুনালে রায় হওয়ার পর জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির নেতা আবদুল আলীমের মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন ছিল। তাঁরা কারাভোগের সময় মারা যাওয়ায় ওই আপিল অকার্যকর হয়ে গেছে। চারটি মামলার আসামি পলাতক আছেন। এঁরা হলেন আবুল কালাম আযাদ, চৌধুরী মঈনুদ্দীন, আশরাফুজ্জামান খান, এম এ জাহিদ হোসেন ও হাসান আলী। এঁদের সবার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আপিলের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ধরা পড়লে বা আত্মসমর্পণ করলে তাঁদের সরাসরি সাজা কার্যকর করা হবে।
এক ট্রাইব্যুনাল, মামলা বাড়ছে: চলতি বছরে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছিল মাত্র তিনটি। গত সেপ্টেম্বরে দুটি ট্রাইব্যুনাল একীভূত করা হয়। এর মধ্যে তদন্ত সংস্থা থেকে কয়েকটি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এখন একটি মাত্র ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলার বিচার চলছে।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয় সূত্র জানায়, শিগগির আরও কয়েকটি মামলা ট্রাইব্যুনালে যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ মাসে একটি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ হতে পারে। পাঁচটি মামলায় খুব শিগগির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হবে। চারটি মামলায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে। আরও কয়েকটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বা আবেদন করা হবে। তবে এ সংখ্যাটি সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আরও বেশ কয়েকটি মামলা পাইপলাইনে আছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এসব মামলা ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় চলে আসবে। তখন মামলার রীতিমতো জট লেগে যাবে।’
যেভাবে তদন্ত হয়: তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে প্রধানত দুই দিক থেকে। প্রথমত, ক্ষতিগ্রস্ত (ভিকটিম) ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য বা বিচারপ্রার্থী সরাসরি তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ করেন। দ্বিতীয়ত, ২০১০ সালে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হলে দেশের বিভিন্ন আদালতে একাত্তরের হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির অভিযোগে বেশ কিছু মামলা হয়। ওই সব মামলার নথি পরে তদন্ত সংস্থায় স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুসারে তদন্ত সংস্থা নিজ উদ্যোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে।
স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিদের অভিযোগের তদন্ত কীভাবে করা হচ্ছে, জানতে চাইলে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সদস্য এম সানাউল হক বলেন, প্রথমে কোনো অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। যদি তাতে আসামি বা আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাইমা ফেসি (প্রাথমিক অভিযোগ) পাওয়া যায়, তখন পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তের জন্য সংস্থাটি নিজেদের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নেয়। আসামির সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত ও বর্তমান ইতিহাস, প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা, এসব বিষয়ে একটি গোপন তদন্ত করা হয়। এসবে সন্তুষ্ট হলেই তখন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়।
জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী সে জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়েরই হোক, প্রত্যেকের বিচার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আগেই বলেছিলাম, এখন তদন্ত সংস্থায় যে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ এসেছে, তাতে একটি ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিচার এখনো শুরু হলো না।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম।
প্রথম দফায় তদন্ত শুরু হয় ২১ জনের বিরুদ্ধে।
নেতা