Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫ : জিতেও যেন মন ভরল না সাকিব আল হাসানের। আরেকটু যদি জমত ম্যাচটা! আরেকটু উত্তেজনার বুদ্বুদ, আরেকটু রোমাঞ্চের শিহরণ যদি ছড়াত! টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬৯ রানে জিতলে মজা থাকে নাকি! জিততে হবে শেষ ওভারে, ঘাড়ের ওপর প্রতিপক্ষের তপ্ত নিশ্বাসটা বোঝা যাবে। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ঢোকার আগে রংপুর রাইডার্স অধিনায়কের স্বগতোক্তি, ‘এটাই বোধ হয় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে একপেশে ম্যাচ হলো।’
কালকের আগ পর্যন্ত হওয়া ছয় ম্যাচের স্কোরকার্ডও দিচ্ছে এই সাক্ষ্য। ১ রানে ফলাফল নিষ্পত্তি হয়েছে দুই ম্যাচে। ওই দুটি ম্যাচ ছাড়াও শেষ ওভার পর্যন্ত দুদিকেই খেলা ঝুলে ছিল আরও তিন ম্যাচে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সও শেষ বলে জিতেছে। একটার পর একটা শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ দেখে আর সবার মতো হয়তো ‘রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা’র নেশা পেয়ে বসেছিল সাকিবকেও। সেই নেশাটা ছুটিয়ে দেওয়ার দায়দায়িত্ব সাকিবই বয়ে নিতে জানেন একার কাঁধে।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন। পরের ম্যাচে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন শুধু বল হাতে। আর কাল জ্বলে উঠলেন সত্যিকারের অলরাউন্ডারের মতোই। ব্যাটিংয়ে ১৫ বলে অপরাজিত ২৪, ফিল্ডিংয়ে দুটি ক্যাচের একটি তো দুর্দান্ত হলো, বল হাতে ১৬ রানে ৪ উইকেট। একই সঙ্গে তিন বিভাগেই এমন ঔজ্জ্বল্য জাতীয় দলেও অনেক দিন ছড়াননি সাকিব। প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সের একটা ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দিয়েছেন। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি। একটু অসুস্থতা এখনো আছে। সাকিবের আফসোস, ‘শরীরে এখনো শক্তি আসেনি। আজ (কাল) ১৫টা বল খেলেছি, এর মধ্যে ৩-৪টি মারার বল ছিল। কিন্তু মারতে পারিনি।’
রংপুরের ৬ উইকেটে ১৭৬ রানে ফিফটি শুধু ওপেনার লেন্ডল সিমন্সের (৫১)। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৩৮ রানের ওপেনিং জুটির পর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আরও ৫৬ রান যোগ করেছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। তবে শেষ দিকে দলের রানটা দ্রুতই বাড়িয়ে নিতে পারায় সাকিবের আফসোস একটু কমার কথা। ১৬তম ওভারে ইয়াসির শাহকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারার পরের বলেই নাসির জামশেদের হাতে ক্যাচ দেন থিসারা পেরেরা। ৪ উইকেটে ১৩৯ রান তখন রংপুরের। স্কোরবোর্ডে এরপর যোগ হওয়া ৩৭-এর ২৪ রানই সাকিবের ব্যাট থেকে। তৃতীয় ম্যাচে রংপুরের দ্বিতীয় জয়ের পথটা আরও চওড়া করে দেন তিনিই।
প্রথম ম্যাচে পাঁচে আর দ্বিতীয় ম্যাচে তিনে ব্যাট করা সাকিবের কাল ৬ নম্বরে নামাটা ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। তাহলে কি শেষ দিকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা ছিল? সাকিবের ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন, ‘ওদের মুস্তাফিজ আছে, ওর বল করার কথা শেষ দিকে। এ জন্যই থিসারাকে আগে নামানো, যাতে মুস্তাফিজকে ওরা আগে বোলিংয়ে আনে। আমাদের পরিকল্পনা সফলই হয়েছে।’ মিসবাহ-উল-হককে খেলানো হয়নি নাকি পুরোপুরিই দলের সমন্বয়ের কারণে।
সাকিবের সেই সমন্বয়ের সামনে পুরোপুরিই অসহায় লাগল দ্বিতীয় ম্যাচেই হারের দেখা পাওয়া ঢাকা ডায়নামাইটসকে। ব্যাটিংয়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি রংপুরকে তারা হারাতে পারে। অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার ২৯-ই দলের ১০৭ রানে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত অবদান। ঢাকার ব্যাটসম্যানদের জন্য সান্ত্বনা হতে পারে সাকিবের কথাটা। ঢাকার প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ধীরগতির উইকেটের ওপর দায় চাপিয়ে গেছেন ওপেনার শামসুর রহমান। রংপুরের অধিনায়কও সমর্থন করলেন তাঁকে, ‘প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ হওয়ায় উইকেট প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না কিউরেটররা। দিন দিন তাই উইকেট ক্লান্ত হচ্ছে, মন্থর হচ্ছে। বল নিচু হচ্ছে।’ শামসুরকে বোল্ড করা সাকিবের বলটাও অনেকটা ওরকমই ছিল। পরের তিন উইকেট তুলতেও তিনি কাজে লাগিয়েছেন পিচের চরিত্র।
সঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের চরিত্রও কি আরেকবার দেখালেন না সাকিব আল হাসান?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৭৬/৬ (সিমন্স ৫১, সৌম্য ১৮, মিঠুন ৩৪, পেরেরা ২৭, স্যামি ৩, সাকিব ২৪*, আল আমিন ৩, জহুরুল ৭*; নাসির ০/১৩, ফরহাদ রেজা ০/২৪, মুস্তাফিজ ২/৩৮, হাসান ১/৪১, মোশাররফ ১/৩১, ইয়াসির ২/২৪)। ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৯.৪ ওভারে ১০৭ (জামশেদ ১১, শামসুর ২, সাঙ্গাকারা ২৯, মোসাদ্দেক ৩, টেন ডেসকাট ৮, নাসির ১৫, হাসান ১০, ফরহাদ রেজা ১ , ইয়াসির ১২, মোশাররফ ৩, মুস্তাফিজ ১*; সাকিব ৪/১৬, সেনানায়েকে ০/২১, আরাফাত ২/১৫, আল আমিন ০/১৩, স্যামি ০/১০, পেরেরা ৩/২৫, জায়েদ ১/১)।
ফল: রংপুর ৬৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (রংপুর)।