খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫ : খেলা শেষ হতে ১৫ মিনিট বাকি। এ সময় একটা দল যদি ৪-০ গোলে এগিয়ে থাকে, তাহলে সেই দলের খেলোয়াড়দের একটু আলস্য পেয়ে বসা স্বাভাবিকই! মনোযোগেও ঘাটতি দেখা দেওয়াটা খুব বিচিত্র কিছু নয়। কাল বোধ হয় এমন কিছুতেই পেয়ে বসেছিল রিয়াল মাদ্রিদকে! না হলে এমন সহজ ম্যাচে কেউ এভাবে কঠিন করে জেতে?
৭৭ থেকে ৮৮— এই ১২ মিনিটের ঝড়ে স্কোর লাইন ৪-০ থেকে ৪-৩ করে ফেলে শাখতার দোনেৎস্ক! নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর যখন যোগ করা সময় আরও ৪ মিনিট দেখানো হচ্ছিল, রাফায়েল বেনিতেজ আর তাঁর শিষ্যদের অবস্থা কী হয়েছিল কে জানে, তবে রিয়াল সমর্থকদের অবস্থা তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!’
পাঁচ দিন আগের এল ক্লাসিকোতে অমন কষ্টের পর কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে এই ‘উত্থান-পতন’— ইসিজি করালে বোঝা যাবে, সপ্তাহটা রিয়াল সমর্থকদের হৃদয়ে বেশ ভালোই ছাপ রেখে গেল!
শেষের দিকের ওই দুঃস্বপ্নের আগ পর্যন্ত রিয়ালকে অবশ্য ‘রিয়ালে’র মতোই দেখাচ্ছিল। যেমন স্বরূপে দেখাচ্ছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। গত কয়েক ম্যাচ ধরে যেন একটু অচেনাই লাগছিল পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে। এই ম্যাচের আগে টানা তিন ম্যাচে গোলহীন, সব মিলিয়ে আগের ১৩ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল— পরিসংখ্যানটা কোনোমতেই রোনালদোর সঙ্গে যায় না। ইউক্রেনের লাভিভ স্টেডিয়ামে কাল অনেক দিন পর চেনা ছন্দে দেখা গেল রোনালদোকে। দলের প্রথম ও চার নম্বর গোলটি করেছেন, করিয়েছেন বাকি দুটো।
টিসেইরা-ডেনটিনহো জুটিই ম্যাচে ফিরিয়ে আনে শাখতারকে। ছবি: এএফপি।আসলে মেসি ছিলেন না বলেই হয়তো একটু ছন্দহীন ছিলেন রোনালদোও। সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে না পেয়ে হয়তো একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সংকটে ভুগছিলেন। আগের দিন মেসি দুই গোল আর এক অ্যাসিস্ট করেছেন, তার জবাব দিতে রোনালদো দুই গোলের সঙ্গে করলেন দুই অ্যাসিস্ট! কয়েকটি সুযোগ মিস না করলে হ্যাটট্রিকটাও হয়ে যায়।
রিয়াল কোচ বেনিতেজের জন্য স্বস্তির বিষয়, রোনালদোর সঙ্গে অনেক দিন পর চেনা রূপে দেখা গেল গ্যারেথ বেলকেও। উইংয়ে খালি জায়গা পেলে কতটুকু ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, তার একটা প্রদর্শনীই দিয়ে রাখলেন যেন। ১৮ মিনিটে শাখতার রক্ষণের ভুলের সুযোগে বল নিয়ে ঢুকে গেলেন শাখতার বক্সে, তাঁর আলতো ক্রস থেকেই দুরূহ কোণ থেকে রোনালদোর হেডে মাদ্রিদ পেয়েছে প্রথম গোলটা। ৭০ মিনিটে মাদ্রিদের চতুর্থ গোলটাও একই যুগলবন্দীতে।
এর মাঝে ৫০ ও ৫২ মিনিটে মদরিচ ও কারভাহালকে দিয়ে দুটি গোল করিয়ে নিয়েছেন রোনালদো। মদরিচের গোলটি তো ছিল রিয়ালের চিরায়ত প্রতি আক্রমণের দুর্দান্ত উদাহরণ। কারভাহাল-রোনালদো সমন্বয়ের পর ডান প্রান্ত থেকে ক্রস পেয়ে ১২ গজ দূর থেকে গোলটি করেন মদরিচ।
৭০ মিনিটে চতুর্থ গোলের পরই মদরিচ ও বেলকে উঠিয়ে নেন বেনিতেজ। এরপরই শুরু হলো শাখতারের ফিরে আসার গল্পৃমানে, প্রায় ফিরে আসার গল্প। দুই ব্রাজিলিয়ান অ্যালেক্স টিসেইরা ও ডেনটিনহো ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন শাখতারকে। ৭৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন টিসেইরা। এর ছয় মিনিট পর ডেনটিনহো, আবার পাঁচ মিনিট পর টিসেইরার গোল—শেষ ছয় মিনিটে রিয়ালের কলজেটা একেবারে জিভের ডগাতেই নিয়ে এসেছিল শাখতার।
প্রথমার্ধে যে ম্যাচ দেখেছে মাত্র ১ গোল, তাতেই শেষ ৪৫ মিনিটে গোল এল আরও ছয়টি! ফুটবল কত দ্রুতই না রং বদলে যায়! তথ্যসূত্র: বিবিসি, ইএসপিএন।