Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

42খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫ : বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি ঠেকাতে মাংস খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা।
‘চেইঞ্জিং ক্লাইমেট, চেইঞ্জিং ডায়েটস: পাথওয়েস টু লোয়ার মিট কনজাম্পশন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে চ্যাথম হাউজ বলেছে, অতিরিক্ত মাংস ভোজনের এই বিপদ সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে চিহ্নিত করা গেলে তা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ‘বড় ভূমিকা’ রাখতে পারে।
“আর তা না পারলে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপদসীমা অতিক্রম ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ৩০ নভেম্বর বসছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিজ’ বা কপ এর ২১তম সম্মেলন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সম্মেলন ঘিরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যতটা গুরুত্ব পাচ্ছে তা ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগে কখনও পায়নি।
বিবিসি লিখেছে, কার্বন নিঃসরণ কমাতে আন্তর্জাতিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ও পরিবহন খাত এ সম্মেলন ঘিরে গুরুত্ব পেলেও গবাদিপশু খাতের বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। অথচ বিশ্বের মোট গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রায় ১৫ শতাংশ গবাদি পশুর কারণেই নিঃসরিত হয়, যা সব গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ ও উড়োজাহাজের নিঃসরিত মোট গ্যাসের প্রায় সমান।
উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকদিন ধরেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নকে দায়ী করে আসছে। দূষণের ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দূষণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবিও রয়েছে।
চ্যাথম হাউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের মতো মাংস খাওয়ার দিক দিয়েও বিশ্বে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রত্যেক নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ২৫০ গ্রাম মাংস খান; স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় চারগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গরুর খামার। ছবি: রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি গরুর খামার। ছবি: রয়টার্স মাংস ভোজনে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার গবাদিপশু উৎপাদনকারী দেশগুলো। আর ভারতীয়রা প্রতিদিন গড়ে ১০ গ্রামেরও কম মাংস খান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পোন্নত দেশে মাংস ভোজনের হার বেশি হলেও সম্পদ ও খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে সাধারণ একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মানুষের আয় যতো বাড়ছে, তাদের মাংস ভোজনের হারও বাড়ছে।
এভাবে চলতে থাকলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে মাংস ভোজনের হার এখনকার তুলনায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
আর অধিকাংশ দেশই এ বিষয়টিতে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে গত ২১ অক্টোবর পর্যন্ত যে ১২০টি দেশ পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ২১টিতে গবাদিপশু খাতের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে।
চ্যাথম হাউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারগুলো ভোটারদের ব্যক্তিগত পছন্দে হস্তক্ষেপ করতে ভয় পায়। আর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক নিয়ে জনগণে মধ্যে সচেতনতা না থাকায় এ নিয়ে সরকারগুলোও তেমন চাপে নেই। এই ‘চক্রের’ ফলেই গুরুত্ব বুঝলেও সরকারগুলোর প্রাধান্যের তালিকায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো নীতি রাখা হয় না।
এ পরিস্থিতিতে প্রথমত জনসচেতনা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে চ্যাথম হাউজ। সেইসঙ্গে সরকারকেও কিছু ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হবে। যেমন সরকারি সংস্থায় যেসব খাদ্য সরবরাহ করা হয় তার একটি বড় অংশ হতে পারে নিরামিষ। এতে একদিকে খাদ্য সরবরাহকারীরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে সরকারি অফিস, স্কুল, সশস্ত্র বাহিনী, হাসপাতাল ও কারাগারে যারা এই খাবার খাবেন, তাদের কাছেও একটি শক্তিশালী বার্তা যাবে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চারটি দেশে গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে, সরকারের দিক থেকে খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত নতুন নীতি করা হলে এবং তাতে যথেষ্ট যুক্তি থাকলে তা মানতে জনগণের আপত্তি নেই।
এছাড়া জনগণ প্রত্যাশা করে সরকার তাদের মঙ্গলের জন্যই কাজ করবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বিষয়ে সরকার ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে শক্তিশালী বার্তা পেলে নীতি পরিবর্তনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অজনপ্রিয় হলেও পরে জনগণ তা মেনে নিতে পারে।
জনসচেতনা তৈরির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে ধূমপান ও মদপান প্রতিরোধে যে সাফল্য পাওয়া গেছে সে বিষয়টিকে এক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে চ্যাথম হাউজ।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল-আইপিসিসি বলছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা গত এক শতকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়বে মানবজাতি। তাপমাত্রাকে বিপদসীমার নিচে বেঁধে রাখার পথ খুঁজতেই কপ-২১ গুরুত্বপূর্ণ।