Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

69খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৫ : কর্তৃত্ব তাদের হাতে, আয়ের ভাগও তারাই বেশি পাবে—এই ছিল মোটা দাগে আইসিসিতে তিন মোড়লের নিয়ন্ত্রণের মূলকথা। যার উদ্যোক্তা ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। সেসময় ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এন শ্রীনিবাসন। শ্রীনিবাসনকে সরিয়ে এখন আইসিসি চেয়ারম্যানের পদে শশাঙ্ক মনোহর। একই সঙ্গে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেরও প্রধান।
তিন বোর্ডের হাতে সব ক্ষমতা রেখেই গত বছর নীতিতে সংশোধনী এনেছিল আইসিসি। আইসিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে মনোনীত হওয়া মনোহর এই নীতির পক্ষে নন। শুধু তা-ই নয়, এই নীতিকে তিনি ‘জোর-জবরদস্তিমূলক খবরদারি’ও বলেছেন তিনি।
ভারতীয় দৈনিক হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার একচোখা নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন, ‘তিনটি প্রধান দেশ আইসিসিতে খবরদারি করবে—এই নীতির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। সব সময়ই বলেছি, প্রতিষ্ঠান সব সময়ই এক-দুজনের স্বার্থের চেয়ে বড়।’
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো ক্রিকেটের আর্থিক, বাণিজ্যিক সব ক্ষেত্রেই এই তিন দেশের কর্তৃত্ব আছে বর্তমান নিয়মে। কিন্তু এ ব্যাপারে মনোহরের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন, ‘আপনি কখনোই নিশ্চয়তা দিতে পারেন না কে এই দেশগুলোতে সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকবে। এখনকার আইসিসির সংবিধানে যে অবস্থা, তাতে তিন প্রধান দেশই ক্ষমতা বলে আইসিসির সর্বময় ক্ষমতার এই কমিটিরও প্রধান হবে। আমার কাছে এটিকে ভুল মনে হয়। সবচেয়ে যোগ্য লোকেরই এখানে আসা উচিত, সেটি জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা সহযোগী কোনো দেশ থেকেও আসতে পারে।’
আইসিসির আয়ের সিংহভাগ আয় পকেটে পুরছে ওই তিন দল। এই আয়-বণ্টন নীতির বিপক্ষেও তিনি, ‘আইসিসির মোট আয়ের ২২ শতাংশ ভারত পাচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। তবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু ক্ষমতা আছে বলে আপনি গরিবকে আরও গরিব, ধনীকে আরও ধনী করতে পারেন না। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ নয়, আইসিসি পুরো বিশ্বেই ক্রিকেট পরিচালনা করে।’
আইসিসিতে আরও একটি বড় সংশোধনের দিকেও আঙুল তুলেছেন মনোহর। ভারত এই মুহূর্তে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগান দেয় ঠিকই, কিন্তু এর পুরো কৃতিত্ব ভারতের একার নয়। বাকি দলগুলো ভারতে এসে খেলে, আকর্ষণীয় ক্রিকেট উপহার দেয় বলেই না এই খাতে এত বিনিয়োগ। তাহলে শুধু ভারত একা কৃতিত্ব নেবে কেন।
মনোহরের এ সবই ‘ব্যক্তিগত মতামত’। যে কথাগুলো হয়তো ভারতের অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবে নিজের দূরদৃষ্টি দিয়ে মনোহর বলছেন, বর্তমান পদ্ধতি ভারতেরই ক্ষতি করবে সবচেয়ে বেশি, ‘ভারত বেশি আয় করে অন্য দেশগুলো ভারতে এসে খেলে যায় বলেই। এখন যদি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে, তাহলে স্পনসর আর সম্প্রচারকরাও আপনাকে খুব বেশি টাকা দেবে না। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ থেকে আপনি আয় করছেন কারণ শুধু আপনি খেলছেন না, একইভাবে আপনার বিপক্ষেও একটি ভালো দল খেলছে বলে। ভারত য​দি একাই এক নম্বর দল হয়, আর বাকি দলগুলো প্রায় সবার শক্তি যদি নয়-দশ নম্বরের দলের মতো হয়ে যায়, তাহলে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কী করে? তাই আপনার এমন কোনো কিছু করা উচিত হবে না যাতে বাকিদের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। তারা খর্ব শক্তির দল হয়ে পড়ে। একপেশে লড়াই আর কে দেখবে! এই দৃষ্টিকোণ থেকে আইসিসির ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বর্তমান সংবিধানে কোনো এক দেশের ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানই আইসিসির প্রধান হচ্ছেন—এতেও স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন মনোহর, ‘আমি বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি হয়ে আইসিসিতে এসেছি। আমার মূল দায়িত্বই হচ্ছে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা। তাহলে, আমি আইসিসির স্বার্থ কীভাবে দেখব?’ এ কারণে মনোহর মনে করেন, আইসিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব যিনি নেবেন, তিনি আর নিজ দেশের বোর্ডের দায়িত্ব থাকবেন না।
তাহলে কি আইসিসিতে তিন মোড়লের ক্ষমতার অবসান হতে যাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আপাতত সামান্যই। মনোহর একা চাইলে তো হবে না, বাকিদেরও বলতে হবে। বিশেষ করে বাকি দুই মোড়লকেও। ​মনোহর তাই বলছেন, ‘এই নীতিগুলোর সঙ্গে আমি একমত নই। এগুলো শুধুই আমার মত। তবে ভবিষ্যতে কী হবে আমি জানি না।’
তবে কেউ না কেউ তো ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে দিকে তাকিয়ে অতি জরুরি কথাগুলো বলল। এবং সবচেয়ে আশার কথা, সেই কথাগুলো বললেন এই মুহূর্তে ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিই। তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো।