খোলা বাজার২৪ ॥শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৫: ক্রিকেটে স্বাগতিক হিসেবে সুবিধা নেওয়া নতুন নয়। নিজেদের শক্তিমত্তা ও কন্ডিশন অনুযায়ী উইকেট তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলার বিষয়টি ক্রিকেটেরই অংশ। অস্ট্রেলিয়া- দক্ষিণ আফ্রিকা পেসবান্ধব উইকেট বানায়, উপমহাদেশের দলগুলো সুবিধা নেয় স্পিন-সহায়ক উইকেট বানিয়ে। ইংল্যান্ড প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নেয় ভেজা পরিবেশে সুইং উপযোগী উইকেট তৈরি করে।
কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়া এক জিনিস, আর অন্যায় সুবিধা নেওয়া আরেক জিনিস। তাহলে আর ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা কেন? কোথায় থাকে ক্রিকেটীয় চেতনার ব্রজবুলি?
চলমান ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ প্রশ্নটা আবার তুলে দিল। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই সিরিজে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পারেনি। ফিফটিই হয়েছে মাত্র চারটি! ৪০ গড়ে রান তুলতে পেরেছেন মাত্র তিনজন। বাকি সবার গড় ২৫-এর নিচে! আড়াই-তিন দিনে টেস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে।
স্বাগতিক দেশের সুবিধা নিতে গিয়ে কোনো দল যেন বাড়াবাড়ি না করে, সেই লক্ষ্যে ক্রিকেট থেকে টসই উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। পন্টিং প্রস্তাব দিয়েছিলেন ক্রিকেটকে টসহীন করে আগে ব্যাটিং কিংবা বোলিং করার ব্যাপারটি ‘অতিথি’ দলের ওপর ছেড়ে দেওয়ার। অতিথি দল যদি অচেনা পরিবেশে উইকেট দেখে প্রথমে ব্যাটিং বা বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবে। পন্টিংয়ের মতে, সে ক্ষেত্রে স্বাগতিক দলও ভারসাম্যপূর্ণ উইকেট তৈরি করবে। আবহাওয়া ও কন্ডিশনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও অনেকটাই কমে যাবে যদি টস নামের লটারিকে ক্রিকেট থেকে দূরে রাখা যায়।
ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড দ্বিতীয় বিভাগ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তুলে দিচ্ছে কয়েক শ বছরের সঙ্গী হয়ে থাকা এই ‘টস’ ব্যাপারটিকেই। দেখা যাক ফল কী হয়!
কিন্তু চলমান নাগপুর টেস্ট আরেকটি প্রশ্ন তুলে দিল। পন্টিংয়ের প্রস্তাবও যেন স্বাগতিকদের হোম কন্ডিশনের অবৈধ সুবিধা পেতে না দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। নাগপুর টেস্টটা ‘টসহীন’ হলেও খুব বেশি হেরফের হতো না।
ক্রিকেটে ভারসাম্য আনার জন্য টস তুলে দেওয়াও সমাধান হিসেবে ‘যথেষ্ট’ নয়। ক্রিকেটে ভারসাম্য আনতে ওয়াসিম আকরামের দিচ্ছেন আরও একটি প্রস্তাব। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে স্বাগতিক সুবিধার অপব্যবহার দেখে তাঁর অভিমত, উইকেট তৈরির বিষয়টিই এখন নিরপেক্ষ কিউরেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
ক্রিকেট নিরপেক্ষ আম্পায়ার দেখেছে অনেক আগেই। নিরপেক্ষ ভেন্যুও এখন ক্রিকেটে যথেষ্ট ব্যবহৃত। তাই বলে নিরপেক্ষ কিউরেটর! আকরাম এর প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় লেখা এক কলামে, ‘নিরপেক্ষ আম্পায়ারের মতো টেস্টে নিরপেক্ষ কিউরেটর দিয়ে উইকেট বানানোর নিয়মও চালু করা উচিত।’ তিনি টেস্ট ম্যাচগুলোতে উইকেটের দায়িত্ব আইসিসি নিজেই নিতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। এটা করা না হলে, আকরামের আশঙ্কা, ‘বাজে উইকেট বানানোর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে আমরা (কুস্তি লড়াইয়ের) “আখড়া” পেতেই থাকব।