Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4খোলা বাজার২৪॥ শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের। ফাঁসিতে ঝুলানোর কয়েকঘণ্টা আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় সাকা এবং মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। তবে সাকা এবং মুজাহিদের সাথে দেখা করে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তাদের পরিবার। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন, তাহলে সত্য বলছে কে? সরকার নাকি সাকা-মুজাহিদ পরিবার?
গত ২১ নভেম্বর শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এ ২ যুদ্ধাপরাধীর। এর আগে শনিবার সকাল ১০টার দিকে সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানায় কারা অধিদপ্তর। দুই ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারের রজনীগন্ধা সেলে গিয়ে পৃথকভাবে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাইলে তারা লিখিতভাবে এই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন বলে গনমাধ্যমকে জানানো হয়।
অন্যদিকে শনিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন বলে গণমাধ্যমকে জানান মন্ত্রী। এরপরই সাকা এবং মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নামঞ্জুর করেন বলে জানান তিনি।
এরপর রাত পৌনে ১১টার দিকে কারাগারের ভেতরে সাকা চৌধুরীর সাথে দেখা করে আসার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সাকা চৌধুরীর বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী জানান, তার বাবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছেন।
ওইদিন হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেছেন কি না। জবাবে বাবা বলেছেন, কে বলেছে এমন বাজে কথা।’ হুম্মাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমি যখন বাবাকে বলি সরকার বলছে এ কথা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তাকে হারাতে না পেরে এখন তার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।’
অন্যদিকে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদও তার ছেলের সাথে শেষ সাক্ষাতে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি অসত্য বলে দাবি করেছেন। ফাঁসির পর রোববার ভোরে মুজাহিদের মরদেহ ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার ছেলে মাবরুর এ দাবি করেন। মুজাহিদের ছেলে বলেন, ‘প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বোগাস এবং প্রশাসনের একটি সাজানো নাটক। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে কারাগারে বাবা (মুজাহিদ) জানিয়েছেন তিনি কোনো মার্সি পিটিশন করেননি।’
এসময় মাবরুর দাবি করেন, মুজাহিদ তাকে বলেন, ‘এ জালিম সরকারের কাছে আমার প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই সরকার গত ৫ বছর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে মিথ্যাচার করেছে।’
এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার বিষয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের পরিবারের অভিযোগকে উড়িয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করলেও তা নিয়ে তাদের পরিবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, উনারা (সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ) যে দরখাস্ত করেছিলেন, তা সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করা। ক্ষমা না চাইলেও কিন্তু রায় কার্যকর করতে পারতাম। এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে অবান্তর, এটা একটা ইস্যু সৃষ্টি করা।’
একইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তারা (সাকা ও মুজাহিদ) ক্ষমা চাইবেন না কিন্তু শনিবার সকালের দিকে মুজাহিদ সাহেব যে আবেদন করেছিলেন তার শিরোনামেই আর্টিকেল ফর্টিনাইনের কথা ছিল। আর সালাউদ্দিন কাদের আবেদন করেছেন ইংরেজিতে। সেখানেও শেষ দিকে আর্টিকেল ফর্টিনাইনের কথা আছে।’
সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ যে আবেদন করেছেন, তার প্রমাণ সরকারের হাতে আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের পরিবার বললে হবে না। কারণ আমাদের কাছে চিঠিপত্র রয়েছে, প্রমাণ রয়েছে। তাদের লিখিত অ্যাপ্লিকেশন আমাদের হাতে রয়েছে। সেই অ্যাপ্লিকেশনের যৌক্তিকতা আছে কি না এবং অ্যাপ্লিকেশন যথার্থ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর মতামত নিয়েই আমরা বাকি কাজ করেছি। কাজেই এখানে আর কথা বলার অবকাশ নেই।’
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার বিষয়ে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ পরিবার এবং সরকারের মধ্যে দ্বিমুখী এ বক্তব্যের কারণে জনমনে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। সরকার এবং পরিবারের দ্বিমুখী এ বক্তব্যের কারণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ অনেক জায়গায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন সাংবাদিকরা দেখতে চাইলে, তা দেখানো যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী।