খোলা বাজার২৪॥ শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫ বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের মধ্যে দুজন এখনো বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গতকাল শুক্রবার ছাড়া পেয়েছেন অন্যজন। তিনজনই রক্তাক্ত ওই হামলার বর্ণনা দিয়েছেন।
ওই দিনের হামলায় গুলিবিদ্ধ শ্রমিক আবু তাহেরের বাড়ি (৫৫) শিবগঞ্জ উপজেলার চককানু গ্রামে। জিয়াউর রহমান মেডিকেলের সার্জারি বিভাগে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, , ‘শিয়া-সুন্নি হামরায় খুব অ্যাকটা বুঝি না। গরিব মানুষ। সারা দিন কাজ করি। মাঝেমধ্যে ইমামবাড়াতে বয়ান শুনতে যাই।’ গত বৃহস্পতিবার গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। মাগরিবের আজান শুনে তাড়াতাড়ি মসজিদে যান। নামাজ শেষে দোয়া পড়ছিলেন। বললেন, ‘নামাজ শ্যাষ। দোয়া পড়চ্চিলাম। হঠাৎ ক্যাট ক্যাট শব্দ। তারপর সব শ্যাষ। মোয়াজ্জিনসহ কয়েকজন গুলিতে লুটে পরিচে। কাতরাচ্চে। দেকি রক্ত দিয়ে হামার পাও ভাসে যাচ্চে। তারপর জ্ঞান হারায়।’
হামলার বর্ণনা দিলেন শিয়া মসজিদের ইমাম শাহনুর রহমান (৩৫)। তিনিও একই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পোস্ট অপারেটিভ বিভাগে চিকিৎসাধীন। জানালেন, দিনাজপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছেন। খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরবি ও ফারসি ভাষা শিখেছেন। শিয়া মতাদর্শ গ্রহণের পর ছয় বছর আগে ওই মসজিদের ইমাম হিসেবে কাজ শুরু করেন। কখনো কোনো দিন কেউ মসজিদে হুমকি দেননি। গত বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজে ১৫ থেকে ১৬ জন মুসল্লি নিয়ে নামাজ পড়ছিলেন। অপরিচিত কেউ ছিলেন না। এশার নামাজের সময় হঠাৎ পেছন থেকে হামলা করা হয়। কিছু গুলি পিলারে লাগে। কিছু লাগে মুসল্লিদের শরীরে। তিনি বলেন, ‘একটা গুলি হামার পাঁজরাত অ্যাসে লাগে। কলকল করে রক্ত ঝরছিল। যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ হয়্যা আসিচ্চিল। মনে হচ্চিল মরে যাচ্চি। এমন বর্বর হামলা জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়া কেউ করতে পারে না।’
মসজিদে নামাজ পড়ার সময় পায়ে গুলি লেগেছিল মুসল্লি এবং মসজিদের জমিদাতাদের একজন আফতাব হোসেনের (৪৫)। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছাড়া পেয়েছেন গতকাল। গতকাল সন্ধ্যায় মসজিদের পাশে নিজের বাড়িতে আফতাব বলেন ভয়ংকর মুহূর্তগুলোর কথা। তাঁর ভাষ্য, ‘মাগরিবের নামাজ শ্যাষ। দোয়া পরিচ্চিলাম, কেউ এশার নামাজের প্রস্তুতি লিচ্চিলাম। হঠাৎ ঠাঁই ঠাঁই গুলির শব্দ। পিছনে ফিরে দেকি শুধু আলোর ঝলকানি। গোটা মসজিদ ধোঁয়ায় অন্ধকার। সবাই চিৎকার করিচ্চে। পায়ের দিকে তাকায়ে দেকি চিরচির করে রক্ত পরিচ্চে।