খোলা বাজার২৪॥ রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫ : হাতে কোনো সূত্র নেই। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির একটি অংশের সদস্যরাই বগুড়ার শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদে হামলা চালিয়েছেন। সারা দেশের ঘটনার ধারাবাহিকতা এবং এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা এ রকম ধারণা করছেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিবগঞ্জের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শনিবার আদালত তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদে হামলায় একজন নিহত ও তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার রাতেই পুলিশ পাশের গ্রাম সৈয়দ দামগাড়া থেকে আনোয়ার হোসেন (৫৫) ও জুয়েল মিয়াকে (২০) এবং পরদিন রাতে শিবগঞ্জের মোলামগাড়ী গ্রামের এমদাদুল উলুম কওমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শামসুল আলমকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। গতকাল আদালত আনোয়ার ও জুয়েলের সাত দিন এবং শামসুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আনোয়ার সাবেক সেনা সদস্য, তিনি জেএমবির এহসার সদস্য ও প্রশিক্ষক। তিনি এর আগে ২০১০ সালেও জেএমবি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আর, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় আলিম (একাদশ) শ্রেণির ছাত্র জুয়েল মিয়াকে সাম্প্রতিক চলাফেরার কারণে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তাঁদের দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে গতকাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য তাঁরা পাননি।
একই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে র্যাব দুজনকে আটক করেছে। তাঁদের একজন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহীনুর রহমান (২৪)। তাঁর বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার আলাদীপুর গ্রামে। অন্যজন হলেন আমতলী বন্দরের ব্যবসায়ী রায়হান আলী (২৮)। দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাব-১২ বগুড়ার স্পেশাল কোম্পানির অধিনায়ক মেজর এ এফ এম আজমল হোসেন জানিয়েছেন।
আতঙ্ক কাটেনি: এদিকে হামলার পর এখানকার শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। এখানকার বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট গতকালও বন্ধ ছিল। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গতকাল পর্যন্ত ওই শিয়া মসজিদে নামাজ শুরু হয়নি।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ ইমাম শাহীনুর রহমান ও দুই মুসল্লি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে শাহীনুর রহমানের কোমর থেকে গুলি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার না করায় তাঁর পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইমামের চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে বগুড়া জেলা পুলিশ। শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার সম্ভব না হলে পুলিশ তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচারের চিন্তা করছে।
‘হামাকেরে এখন কী হবি?’
শিয়া মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত মোয়াজ্জেমের বাড়িতে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শোকে এখনো যেন পাথর হয়ে আছে গোটা পরিবার। তার সঙ্গে জেঁকে বসেছে দরিদ্র পরিবারটি সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে, সেই চিন্তা।
মোয়াজ্জেমের স্ত্রী কমেলা বেগম (৫৮) আর্তনাদ করতে করতে বলছিলেন, ‘বিকালে বাজারোত থ্যাকা লতুন সবজি আর কাঁচা মরিচ বাড়িত লিয়া অ্যাসা কলো, “এগুলান রান্না করো। নামাজ পড়্যা অ্যাসা ভাত খামো।” হামি সেগুলান রান্দিছিও। কিন্তু উনি আর খাবার অ্যালেন না। তার বদলে অ্যালো তাঁর গুলি লাগার সংবাদ।’
মোয়াজ্জেমের বাড়িতে এখনো লোকজন আসছেন, পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু কোন আক্রোশে, কারা এই বৃদ্ধ লোকটিকে এভাবে খুন করে গেল, সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই কারও কাছেই। আকস্মিক এ ঘটনায় হতভম্ব মোয়াজ্জেমের পরিবারসহ পুরো গ্রামবাসী।
কমেলা বেগম বারবারই বলছিলেন, ‘হামাকেরে একন কী হবি? হামরা চলমো কেমনে?’