খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: আমার বড় ছেলে আইয়ানের জন্মদিন ছিল গত ২৪ অক্টোবর। আট বছর হলো। মানুষ হিসেবে আমি নির্লিপ্ত ধরনের। মানবিক অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ খুব কম। অনেক মায়েদের দেখি, তাদের সন্তানদের যখন-তখন জড়িয়ে ধরছে, চকাস্ চকাস্ চুমু খাচ্ছে। আমি কেন যেন পারি না। সেই হিসেবে আমাকে আবেগ বর্জিত মানুষ বলা যায়। মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করি, তাহলে কী আমি আমার সন্তানদের কম ভালোবাস্তি
আল্লাহর অশেষ রহমতে ড্রাইভিং টেস্ট পাস করার পর থেকে আইয়ানকে স্কুলে দিয়ে আসা আর নিয়ে আসা আমিই করি। আইয়ানের স্কুলের সামনের রাস্তায় একটা বিশেষ লেন আছে। বেশ মজার। যেখানে সাদা কালি দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত লেখা—কিস অ্যান্ড ড্রাইভ, কিস অ্যান্ড ড্রাইভ, কিস অ্যান্ড ড্রাইভৃ। তার মানে ওই বিশেষ লেনটা দুই মিনিটের পার্কিং। শুধু বাচ্চাদের স্কুলে ড্রপ করার জন্য। পার্ক করে বসে থাকার জন্য নয়।
প্রথম যে দিন আইয়ানকে স্কুলে দিতে গেলাম, সেই বিশেষ লেন কিস অ্যান্ড ড্রাইভ লেখা জোনে গাড়ি পার্ক করতেই আইয়ান বলল, মামনি, কিস অ্যান্ড ড্রাইভ জোনে নামালে আমাকে কিস করে ড্রপ করবে। এই জোনের রুল এটা। আমি খুব অবাক হলাম আর ওর বুদ্ধিদীপ্ত কথায় চমৎকৃত না হয়ে পারলাম না।
স্কুলের সামনে লেখিকার দুই ছেলেএখানে যারা আমাদের চোখে বিদেশি, তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানদেরও ঘর থেকে বের হওয়ার সময় একবার, ঘরে ফেরার পর একবার, উঠতে বসতে চুমু খাচ্ছে। হানি, লাভ, ডার্লিং বিশেষণ ছাড়া কথা বলে না। অথচ এত ভালোবাসার ফলাফল কী? সন্তানরা শুধু অপেক্ষা করে তার পরিণত বয়স বা অ্যাডাল্ট হওয়া পর্যন্ত। তারপর বাবা-মার থেকে আলাদা থাকা শুরু করে। ওরা মনে করে, অ্যাডাল্ট হয়ে যাওয়ার পরেও মা-বাবার সঙ্গে একসঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকা খুব অসম্মানজনক আর লজ্জার। বন্ধু-বান্ধবরাই বা কী বলবে! অপরদিকে বাঙালি সন্তানরা চেষ্টা করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবা-মাকে আগলে রাখতে।
আইয়ান তার চারপাশে শুধু দেখছে অজি বাবা-মা আর সন্তানদের চুমুর আদান-প্রদান। ওর মনে হয়তো তাই ওদের সঙ্গে আমাদের মতো বাঙালি বাবা-মায়ের ভালোবাসার একটা পড়সঢ়ধৎরংড়হ চলে আসছে। ওর এখন ৮ বছর, এটাও আমি নিশ্চিন্ত জানি, আরও আট বছর পর আইয়ান বুঝতে পারবে বাঙালি বাবা-মায়ের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাবা-মায়ের ভালোবাসার পার্থক্য কোথায়