খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কুখ্যাত জঙ্গি ‘জিহাদি জন’ সম্প্রতি সিরিয়ায় নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আইএসের এই শিরñেদকারীকে কীভাবে সিরিয়ায় খুঁজে পাওয়া গেল, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল আছে। সেই কৌতূহল মেটাতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে বিবিসি।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাকায় ‘জিহাদি জন’ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন বলে খবর প্রকাশিত হয়। কুয়েতি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মোহাম্মদ এমওয়াজির (জিহাদি জন) গতিবিধির ওপর বেশ কিছু সময় ধরে নজর রাখছিলেন আটলান্টিকের উভয় প্রান্তের কর্মকর্তারা। জিহাদি জন ঠিক কোথায় আছেন, তা বের করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের চেষ্টা ছিল ওই জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয় করা।
বিশেষ করে পশ্চিমা জিম্মিদের শিরñেদের যেসব ভিডিওচিত্র আইএস প্রকাশ করেছে, এর বেশির ভাগ চিত্রেই জিহাদি জনকে শিরñেদকারীর ভূমিকায় দেখা যায়। মূলত এ কারণেই বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত তিনি।
২৭ বছর বয়সী এমওয়াজি পশ্চিম লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টারে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ওপর পড়ালেখা করেছেন তিনি। আইএসে যোগ দিতে বেশ কয়েক বছর আগে তিনি সিরিয়ায় যান।
সিরিয়ায় জিহাদি জনের হাতে মার্কিন নাগরিক জেমস ফলি, স্টিভেন সটলফ ও পিটার কাসিগ, যুক্তরাজ্যের ডেভিড হেইন্স ও অ্যালান হেনিং এবং জাপানের কেনজি গোতো ও হারুনা ইউকাওয়া শিরñেদের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশ জিহাদি জনকে হত্যা করতে মরিয়া ছিল।
ওবামা প্রশাসনের অধীনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে সন্ত্রাসবিরোধী উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ডেনিয়েল বেঞ্জামিন বলেন, জিহাদি জনকে খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের সব সূত্রকে কাজে লাগিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, উভয় দেশের কর্মকর্তারা একসঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিলেন। জিহাদি জনকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করছিল।
ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির সিরিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জোশুয়া ল্যান্ডিসের মতে, গোয়েন্দারা খুব সম্ভবত মোবাইল ফোনের আলাপ-আলোচনা শুনছিলেন।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তা ব্রেট ব্র“য়েনের ভাষ্য, দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করা ভিডিওর মাধ্যমে এমওয়াজি নিজেই তাঁর অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন। ওই ভিডিওতে তাঁকে একটি মরুভূমির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। তাঁর হাতে থাকত একটি ছুরি। তাঁর মুখমণ্ডল থাকত ঢাকা। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ শোনা যেত। দেখা যেত তাঁর হাত।
কারও অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের সূত্রের ওপর নির্ভর করেন। ব্র“কিংস ইনস্টিটিউশনের উইলিয়াম ম্যাকান্টস বলেন, জিহাদি জনের অবস্থান বের করতে কর্মকর্তারা সম্ভবত মনুষ্য সূত্র ও আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ—উভয়ের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
সিরিয়া সরকারের বিরোধিতাকারী কোয়ালিশন ফর এ ডেমোক্রেটিক সিরিয়ার উপদেষ্টা ইভান ব্যারেট জানান, রাকার অধিকারকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন তিনি। তাঁরা তথ্য সরবরাহ করেন। আর সেই তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার ভাষ্য, গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে কারও অবস্থান বের করতে সক্ষম। জিহাদি জনকে বেশ কিছু সময় ধরে আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের গ্যারি লাফ্রি বলেন, জিহাদি জনকে চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই হামলা প্রমাণ করে, আইএস অপরাজেয় নয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন মনে করেন, জিহাদি জনকে হত্যা সম্ভবত বিশ্বকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ করবে।