খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে; আর নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
অথচ জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি ছাড়া অন্য সব পণ্যের ক্ষেত্রেই এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ গতবছরের তুলনায় কমেছে।
অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতের বিশ্লেষণ বলছে, পদ্মা সেতুসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের নতুন ‘আবহ’ তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বলেই শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই চার মাসে মোট এক হাজার ৩১৯ কোটি ৪৫ লাখ (১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ কম।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ৪৬ শতাংশ; খাদ্যপণ্যে কমেছে ৩০ শতাংশ।
অন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে প্রবণতা ঠিক এর উল্টো।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বি আইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত রোববার বলেন, পদ্মা সেতু, মগবাজার-মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। এ সব ‘মেগা প্রকল্পের’ কাজ শেষ হলে দেশে শিল্প খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
“এ সব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি নতুন নতুন শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করছেন।ভবিষ্যৎ ব্যবসা মাথায় রেখেই তারা এটা করছেন।”
আর দেশে ‘স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে’ বিরাজ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।
“বিশ্ব পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আগামী বেশ কিছুদিন এই পরিবেশ থাকবে বলে সবাই ধারণা করছেন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের একটা সুষ্ঠু পরিবেশ দেখা দিয়েছে।”
এর আগে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিসংখ্যান দেখার পর ‘এর আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না’- সেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এই গবেষক।
এবারও তেমন সন্দেহ আছে কি না জানতে চাইলে জায়েদ বখত বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার ‘কম হচ্ছে’ বলেই তার মনে হচ্ছে।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক খুবই কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুল্ক শূন্য। কোনটিরই ৩ শতাংশের বেশি নয়। এ কারণে এ ধরনের পণ্য আমদানির এলসি খুলতে শুল্ক বাবদ খুব একটা খরচ হয় না। সে সুযোগে ‘ওভার ইনভয়েসের’ মাধ্যমে ক্যাপিটাল মেশিনারিজের এলসি খোলার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকেন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী।
“অনেক সময় ক্যাপিটাল মেশিনারিজের নামে খালি কন্টেইনারও দেশে আসছে। বন্দরে মাঝেমধ্যে এ ধরনের কন্টেইনার ধরা পড়েছে। আবার কখনও কখনও ক্যাপিটাল মেশিনারিজের নামে এলসি খুলে কনজ্যুমার প্রোডাক্ট আমদানি করা হয়।”
এভাবে নানা প্রক্রিয়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির নামে অর্থ দেশের বাইরে চলে যায় বলে জায়েদ বখত জানান।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমানবলেন, “এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসায় তদন্ত করে সত্যতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যাতে অর্থ পাচার না হয় সেজন্য এখন বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য মোট ১২০ কোটি ১৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের।
গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। নিষ্পত্তি হয়েছিল ৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের।
তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছিল ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ট্যানারি শিল্পে বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ওষুধ শিল্পে বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
এছাড়া প্যাকেজিং, কৃষি এবং সিরামিক শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। তবে টেক্সটাইল ও পাট শিল্পে কমেছে।