খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: সুমাইয়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হবার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলেন নারায়ণগঞ্জ তানজিম হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ। যেখানে হোমিওপ্যাথি ভর্তি হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক সেখানে সুমাইয়ার উ”চমাধ্যমিকেও ভালো ফলাফল (জিপিএ ৪.২০) থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র ‘হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী’ এই অজুহাতে কলেজটিতে তাকে ভর্তি নিচ্ছে না।
জানা যায় নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় এক শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সুমাইয়া পরপর দুই বছর এই কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে। সুমাইয়ার বাবা এ বিষয়ে জানান, যেদিন সুমাইয়াকে নিয়ে ভর্তি ফর্মটি জমা দিতে যাওয়া হয় সেদিন কলেজের অধ্যক্ষ অনুপস্থিত ছিলেন। উপাধ্যক্ষের সাথে কথা হলে তিনি সেই দিনই সডুমাইয়াকে কলেজে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আমি সুমাইয়ার মাধ্যমিক ও উ”চমাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বরপত্র দেখার জন্য অনুরোধ জানাই উপাধ্যক্ষ স্যারকে। একই সাথে সরকারেরর প্রণীত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়েও অবহিত করি। তবুও তিনি কোনভাবেই সুমাইয়াকে ভর্তি করাতে রাজি হন নি। বরং তার পূরণ করা ফর্মটাও জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দেন।
এ বিষয়ে কলেজটির উপাধ্যক্ষের সাথে কথা হলে বললে তিনি জানান, “জেনারেল লাইনের পড়ালেখা সুমাইয়া পারবে না। এখানে তাকে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। ঐ প্রতিবন্ধী আইনটা সাধারণ শিক্ষার জন্য প্রযোজ্য। মেডিকেল লাইনে পড়তে হলে ফিজিক্যাল ফিটনেস লাগবে।”
সুমাইয়ার বাবা জানান, একটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংগঠনের প্রচেষ্টায় জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের দ্বারস্থ হই আমরা। তিনি উক্ত কলেজের অধ্যক্ষকে অনুরোধ করার পরেও কাজ হয় নি।
এ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, আমি কলেজ অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি কিন্তু তারা কেন ভর্তি করছে না তাকে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। তার শারীরিক প্রতিবন্ধিতা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। তাছাড়া একীভূত শিক্ষা আইন ২০১০ তৈরি হয়েছে সম শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে। এরপরে তো আর বাধা থাকতে পারে না।
কিন্তু সুমাইয়ার বাবার অভিযোগ দ্বিতীয়বার ভর্তির চেষ্টা করতে গেলে কলেজ উপাধ্যক্ষ তার সাথে দেখাই করেন নি। একজন কর্মচারিকে দিয়ে বলে পাঠান হোমিওপ্যাথি বোর্ড অনুমতি দিলে তবেই সুমাইয়াকে ভর্তি করানো সম্ভব। গত কয়েক মাস যাবত ঘোরাঘুরি করে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে এখন।
এত অপমান আর সহ্য হয় না বলে দুঃখ করতে করতে সুমাইয়ার মা জানালেন, এত সব ভোগান্তিতে ক্রমেই সুমাইয়া হতাশ হয়ে পড়েছে। কথাবার্তার এই পর্যায়ে সুমাইয়া একটু উদাসীন আর হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হয়ত হতাশা নয়ত অধিকার বঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর এই দীর্ঘশ্বাসে তাদের চেপে রাখা অভিমান আর স্বপ্নভাঙ্গনের সুর বাজে। আর সেই দীর্ঘশ্বাসের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে অধিকার থাকতেও অধিকার বঞ্চিত হতে বাধ্য করা সেই মানুষ কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জমা আক্ষেপ আরোও ঘনীভূত হয়।
সুমাইয়ার মা আরও জানান সে পড়ালেখাতে সব সময়ই ভালো ছিল, তাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সহপাঠীদের সহযোগিতা সবসময় পেয়েছে সে। সুমাইয়ার নিজেরও বেশ উৎসাহ ছিল পড়ালেখায়। ছোটবেলায় সুমাইয়ার আইকিউ টেস্টের ভালো ফলাফল তাকে সমাজের মূলধারায় পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উৎসাহ অনেক বাড়িয়েছে তার বাবা মায়ের। তারা জানান, যেখানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে অন্যান্য শিশুদের আইকিউ সাধারণত ৮০-৯০ হয়ে থাকে সেখানে সুমাইয়ার ফলাফল ছিল ১৩৪। সুমাইয়ার মেধাবিকাশ দেখেই তারা অন্যান্য অ-প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতামাতাদের মতই তাদের সন্তানকেও মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, বিশেষত শিক্ষা জীবন স¤পূর্ণ করতে প্রত্যয়ী হন। শিক্ষিত পরিবার হিসেবে তারা মনে করতেন, প্রতিবন্ধী মানুষ এবং অ-প্রতিবন্ধী মানুষ সকলের জন্যই শিক্ষা অনিবার্য। কিন্তু এমন ভোগান্তির শেষ কোথায় তারা জানেন না।