খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: মাগুরায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ ও এক বৃদ্ধ নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইমতিয়াজুল ইসলামের আদালতে এটি দাখিল করা হয়।
আদালতের পুলিশ পরিদর্শক ফাউজুল কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সেন সুমনসহ এজাহারভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে পনেরো জন এবং তদন্ত শেষে আরও তিনজনকে যুক্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত ১৬ নম্বর আসামি রানার নাম-পরিচয় সঠিকভাবে শনাক্ত করতে না পারায় অভিযোগ থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এজাহারের বাইরে যে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন তৈয়বুর রহমান তোতা (৩৮), আয়নাল শেখ (৩৬) ও মো. মুন্না (২৩)। এ তিনজনের বাড়ি দোয়ারপাড় কারিগরপাড়ায়। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মামলার ৩ নম্বর আসামি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান আজিবর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আলোচিত এ মামলায় জঠরে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার মা নাজমা খাতুন ও বাবা বাচ্চু ভূঁইয়াসহ মোট ৫০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণের জন্য মায়ের সঙ্গে শিশু সুরাইয়াকেও আদালতে হাজির করার আবেদন করা হয়েছে।
মাগুরা পুলিশ সুপার মো. এহসান উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি যেমন স্পর্শকাতর, তেমনি আলোচিত। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো পরিচয় নয়, আমাদের কাছে অপরাধীর অপরাধই মুখ্য। তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় আনা হয় না। তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন ভাবে তদন্তকাজ শেষ করে চার্জশিট দিয়েছেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক বলেন, ‘ঘটনাটি দেশ-বিদেশে আলোচিত। তাই বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করা হয়েছে। একজন ছাড়া এজাহারভুক্ত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তে নতুন করে আরও তিনজনের নাম আসায় তাঁদেরকেও আসামি করা হয়েছে।’
ইমাউল হক আরও বলেন, মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় শিশু সুরাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। সুরাইয়া তার ছোট্ট শরীরে বহন করছে বুলেটের চিহ্ন। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণের জন্য অভিযোগপত্রে তাকে (সুরাইয়াকে) মায়ের সঙ্গে আদালতে হাজির করার আবেদন করা হয়েছে। এটাও এক ধরনের সাক্ষী।
আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী রুবেল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি খুশি। তবে সেদিনই খুশি হব যেদিন আসামিদের ফাঁসি দেখতে পাব।’
তিনি আরও বলেন, এজাহারে রানা নামে ১৬ নম্বরে যাকে আসামি করা হয়েছে তাঁর নামটি ভুল হয়েছে। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি, নামটি হবে ইমরান কারিগর (২৫), বাবা স্মরণ কারিগর। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, মামলার এজাহারের বাইরে তাঁর কোনো কিছু করার নেই।’
গুলিবিদ্ধ শিশুটির মা নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমরা রায় দেখার অপেক্ষায় আছি। আসামিদের কেউ যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার না পেয়ে যায়।’