খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৫ : ওয়াশিংটনে হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের ব্রিফিংয়ে দাবী করা হয় বাংলাদেশে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ওয়াশিংটনের রেভন হাউস অফিস বিল্ডিংয়ে ব্রিফিংটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ওই আলোচনায়।
লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ গুম হয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা।
এছাড়াও বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখার আহ্বান আসে ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া বক্তাদের বক্তব্যে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে কংগ্রেসম্যান জেমস পি মেকগভার্ন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নাগরিক সমাজ প্রায়ই রোষানলে পড়ছে। বিরোধী দলের বিক্ষোভ সমাবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে, নতুবা ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। শুধু তাই না, গণগ্রেফতার করার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব বিষয় যখনই মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা ব্যক্তিবর্গ ডকুমেন্ট আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তখনই তারা হুমকির সম্মুখীন হন আর না হয় কারাবরণ করেন। কোনো কোনো সময় নির্যাতনের শিকার হন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সভা সমাবেশ ও মত প্রকাশের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন, সমাবেশ একটি স্বার্থক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান উপাদান। কারণ বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠী ব্যবস্থাপনায় গণতন্ত্রই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট সুযোগ।
সম্প্রতি উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে মেক গভার্ন বলেন, আল কায়দা ও আইএসআইএসের মতো বহুজাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বাংলাদেশে অবস্থানের সংবাদ দেশটির স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রকে আরো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে নিহত ব্লগার অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহম্মেদ বন্যা বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগার, সাংবাদিক ও প্রকাশকদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন। তার মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। এক্ষেত্রে সরকারও বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। সংশোধিত আইসিটি এ্যাক্টকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবে বিবেচনা করার বিরোধিতা করেন রাফিদা আহম্মেদ। একটি কার্যকর ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণে সর্বোপরি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মাহবুব হাসান সালেহ এ আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। এক ঘণ্টা স্থায়ী এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা কংগ্রেস সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
কমিশন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি ও আলোচনার আয়োজন করতে পারে বলে জানা গেছে।
–